শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমবাণিজ্যে বড় স্বপ্ন

আমবাণিজ্যে বড় স্বপ্ন

আমের বাগান এখন পার্বত্য এলাকাতেও দেখতে পাওয়া যায়। আম উৎপাদনও হয়। নানান ধরনের আমও শোভা পায় বাগানগুলোতে। দেশের অন্য বিভাগগুলোতেও আমের চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। কিন্তু স্বাদ, গন্ধে অতুলনীয় আম বলতে আমরা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বুঝি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুই জেলার পাশের নওগাঁ জেলায় বিল্পব ঘটেছে আম চাষে। গুণে, মানেও বেশ।

বছর ঘুরে এই তিন জেলায় শুরু হয়েছে ৫, ০০০ (পাঁচ হাজার) কোটি টাকার বেশি আমবাণিজ্য। তবে প্রাকৃতিকভাবেই এবারে আমের অফ মৌসুম থাকায় গাছে গাছে আম কিছুটা কম। করোনার কারণে এই তিন জেলায় আমচাষিদের মধ্যে দুই বছর ধরে হতাশা কাজ করছিল। এবার উৎসবের মধ্যে দিয়েই আমবাণিজ্যের মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে।

রাজশাহীতে এ মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির আমবাগানে আম রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানোর মধ্যদিয়ে আম পাড়ার মহোৎসব শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনও গত বৃহস্পতিবার এক সভায় আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। রাজশাহীর বাজারে গুটি আম উঠেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে।

এছাড়া ভোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ, ২৫ মে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি ফোর ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং ইলামতি জাতের আম ২০ আগস্ট নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বেসিক ব্যাংক

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, বেঁধে দেয়া সময়ের আগে কেউ আম নামালে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও ফরমালিনমুক্ত আম বাজারজাত নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ টিম সব সময় মনিটরিং করবে।
রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ টন। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা।

গত বছরের চেয়ে এবার ৫৭২ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হবে। তবে দাম থাকবে চড়া। এতে আমচাষিরা লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করা যায় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। গাছ রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। গত বছর বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর বড় গাছগুলোতে আমের পরিমাণ কম। বড় বাগানগুলোতে গাছের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছর। কোনো কোনো গাছের বয়স তার চেয়েও বেশি। সে কারণে কিছুটা হলেও ফলন কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ারবাজারে ধস রোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট গাছ বিশেষ করে আম্রপালি ও বারি উদ্ভাবিত জাতের আম গাছে মুকুল এসেছে বেশি, আমও ধরেছে বেশি। এই অঞ্চলের পুরনো গাছগুলোর প্রাণশক্তি কম। মুকুল ও ফল আসলে খাবার লাগে, সেটা পাচ্ছে কম। বয়স্ক গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগাতে হবে। তাহলে আমচাষিরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আম সংগ্রহের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া হয়নি বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিলে অনেক ক্ষেত্রে অপরিপক্ব আমও পাড়া হয়। তবে ২০ মের মধ্যে গোপালভোগ, তার ৭ দিন পর ক্ষীরসাপাত, জুনের শুরুতে ফজলি এবং জুনের মাঝামাঝি আম্রপালি পাড়া যেতে পারে।

এদিকে চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্য আম্রপালি’র পরিমানই ৭৬ শতাংশ। নওগাঁর অম্রপালি আম ইতোমধ্যেই সারাদেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন আম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ জেলায় গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।

নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২৫ মে থেকে গুটি বা স্থানীয় আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গোপালভোগ ৩০ মের পর থেকে সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষীরসাপাত ও হিমসাগর আগামী ৫ জুন, নাগফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা ১২ জুন, ফজলি ২২ জুন, আম্রপালি ২৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি আগামী ৪ জুলাই এবং গৌড়মতি ১০ জুলাই থেকে পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম মঞ্জুরে মাওলা বলেন, ইতোমধ্যে আম সংগ্রহের নির্ধারিত সময়ের তালিকা মাঠপর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  হুমকির মুখে টেরিটাওয়েল খাত

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন