রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সয়াবিনের নয় সংকট নৈতিকতার

সয়াবিনের নয় সংকট নৈতিকতার
  • রাজশাহীতে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার তেল জব্দ

চার সদস্যের নিম্ন মধ্যেবিত্ত এক পরিবারের প্রতিদিন গড়ে রান্নার জন্য তেল খরচ হয় ১০০ গ্রাম। মাসে তিন লিটার। সেই হিসেবে এক লাখ ২০ হাজার ৬১৬ লিটার তেল দিয়ে ১২ লাখ ০৬ হাজার ১৬০ পরিবারের এক দিনের রান্না পার হবে। একটু লম্বা সময়ের হিসেব করলে (মাসে তিন লিটার) ওই পরিমানে তেল দিয়ে ৪০ হাজার ২০৬টি পরিবারের এক মাসের রান্নার কাজ চালানো যাবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে অভিযান চালিয়ে চারটি গুদাম থেকে ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। বিকেলে পুলিশ এই অভিযান শুরু করে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) অভিযান এখনও চলছে। অভিযান দীর্ঘ হলে বাড়তে পারে জব্দকৃত তেলের পরিমানও।

এদিকে, সোমবার রাতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ২৭ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্বপন (৪০) ও তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ২৭ হাজার লিটার তেল অসাধু উদ্দেশ্যে মজুদ করেছিল।

মঙ্গলবার ও সোমবার পুলিশ যখন গোডাউনগুলোতেত অভিযান চালিয়ে তেলগুলো জব্দ করে তখন অনেকেরই চোখে কপালে উঠেছিল। বিপুল পরিমানে তেলের মজুদ! যেখানে মানুষ তেলের জন্য হাহাকার করছেন। সারা দেশ প্রায় জুড়ে প্রতিদিনই অসাধু ব্যবসায়ীদের গোডাউন, বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হচ্ছে সয়াবিন তেল। লাখ লাখ লিটার সোয়াবিন তেল জব্দের বিষয়টি উঠে আসছে টিভি বা সংবাদপত্রের পাতায়। এতো তেল জব্দ হচ্ছে তার অর্থ তেল আছে। তাহলে সংকট কিসের? সাধারণ মানুষের জব্দ সয়াবিন সংকট নয়। সংকট নৈতিকতার।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরের বাজারে হাঁড়িভাঙ্গার সুখবর

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউনে তেল জব্দের কারণে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম স্বপনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি চেওখালি গ্রামের ইসমাইল সাজির ছেলে। তবে স্বপন গোডাউনের পাশে নিজ বাড়িতে বসবাস করে। অভিযানের সময় স্বপনের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম পালিয়ে যায়। 

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৭ হাজার লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সোয়াবিন তেল প্রায় ২০ হাজার লিটার। বাকিগুলো সরিষার তেল।

সোমবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পুলিশ এ অভিযান চালায়। জব্দ তেলের মধ্যে ১৯ হাজার ১৭৬ লিটার সোয়াবিন ও ৭ হাজার ৫৪৮ লিটার সরিষার তেল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, তাহেরপুর বাজারে একটি সরকারি গোডাউন রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেটি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে। ওই গোডাউনে টিসিবির পণ্য থাকতে পারে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে ১০০ ড্রাম তেল পাওয়া যায়।

ইফতে খায়ের আলম বলেন, ১০০ ড্রাম তেলের মধ্যে ৬৩ ড্রামে রয়েছে সোয়াবিন তেল। প্রতি ড্রামে তেল রয়েছে ২০৪ লিটার। সে হিসেবে সোয়াবিন তেল রয়েছে ১২ হাজার ৮৫২ লিটার। আর বাকি ৩৭ ড্রামে রয়েছে ৭ হাজার ৫৪৮ লিটার সরিষার তেল।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিাযান চলছিল। সে কারণে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। একের পর এক অভিযানে গোডাউন থেকে বেরিয়ে আসছে সোয়াবিন তেল। এমন চিত্র দেখে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে।

আরও পড়ুনঃ  দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে : অর্থমন্ত্রী

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আমাদের চরমভাবে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। সে কারণে আজ আমাদের এমন দিন দেখতে হচ্ছে। সারা দেশ যেখানে তেলের জন্য হাহাকার সেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার লিটার তেল জব্দ করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। এটা আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের মানসিকতা একেবারেই নিচে নেমে গেছে। এমন কাজ যারা করছে তা মানুষের পর্যায়েই পড়ে না। পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক দেশেই এমন নজির আছে।

জামাত খান আরো বলেন, শুধুমাত্র অল্প কয়েকটা টাকার আশায় এমন ঘৃণিত কাজ যারা করছেন তাদের কঠিন শান্তি হওয়া প্রয়োজন। 

রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, এরা পশুর চেয়েও খারাপ। মানুষ, সমাজ ও দেশকে জিম্মি করে যে ব্যবসা করতে চায় সে পশুর চেয়েও খারাপ। যাদের মানুষ, সমাজ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই এরাই তো এ প্রজন্মের রাজাকার।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন