শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিবন্ধন-ভ্যাটে বড় ফাকি

নিবন্ধন-ভ্যাটে বড় ফাকি

ভ্যাট ফাঁকির প্রতিযোগিতায় কেউ পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন সুযোগে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আইনের ফাঁকফোকরে ভ্যাট ফাঁকিতে মেতে ওঠেছে। শুধু ফাঁকি নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানগুলো (দোকান পাট) ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এমন অভিযোগে কুমিল্লায় দুটি মার্কেটে জরিপ চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। জরিপে দেখা যায়, ওই দুটি মার্কেটের সব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। এছাড়া কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের মাতৃভান্ডারে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। পাশাপাশি বনফুল এবং কিষোয়ান স্নাকসের ভ্যাট ফাঁকির বিভিন্ন তথ্য জব্দ করে সরকারি এ সংস্থাটি।

গতকাল মঙ্গলবার ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুটোর মধ্যে একটি কুমিল্লার টাউনহলের কান্দিরপাড়ের প্লানেট এসআর মার্কেট। অপরটি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট গেটের সম্মুখে ময়নামতি সুপার মার্কেট।

মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, মার্কেট দুটিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। একই সঙ্গে কোনো ভ্যাটও দেয়নি। কুমিল্লায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন এবং সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেনের নেতৃত্বে এ জরিপ চালানো হয়।

প্লানেট এসআর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে ৮০টি দোকান রয়েছে। যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে ৫৬টি দোকান খোলা পায়। এগুলোর কোনোরূপ ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে ১৬ ডিসেম্বর হতে মার্কেটটি চালু হলেও এখনো মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি।

অপরদিকে, ময়নামতি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে ১২০টি দোকান রয়েছে। যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালীন ৬৪টি দোকান খোলা পায়। ভ্যাট গোয়েন্দার কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিষ্ঠানে জরিপকালে চালু থাকা কোন প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের উপর অবস্থিত বহুবছর ধরে চলমান ওই মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন নেই।

আরও পড়ুনঃ  শান্তির আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন

একই দিনে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে ‘মাতৃভান্ডার’এ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা। ওই প্রতিষ্ঠানে মিস্টি বিক্রির সময়ে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। অথচ মাতৃভান্ডারটিতে গড়ে ২২টি চালান কাটার তথ্য পাওয়া যায়। সন্দেহ হলে ভ্যাট গোয়েন্দার দুই কর্মকর্তা বিক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্য বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেন ওই দোকানে। ওইদিনে ভ্যাট গোয়েন্দার উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি ৩১৮টি ভ্যাট কাটা হয়েছে। যেখানে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫০ টাকা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিক্রয়ের সময়ে ভ্যাট চালান না দিয়ে মিস্টির এই দোকানটি ব্যাপকভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, জব্দ করা কাগজে দেখা যায় চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পযর্ন্ত মাতৃভান্ডার মিষ্টান্ন ভান্ডারটি মাত্র ৩৫৪টি ভ্যাট চালান কাটা হয়। এর বিপরীতে বিক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৭ লাখ টাকা। অথচ ভ্যাট গোয়েন্দার একদিনের পর্যবেক্ষণে ৩১৮টি চালানে ৩ লাখ টাকার বিক্রয়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হলেও এর ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব ধরা পড়ে ভ্যাট গোয়েন্দাদের হাতে।

এছাড়া ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি কুমিল্লার বনফুল এন্ড কোং এবং কিষোয়ান স্নাকসের কুমিল্লা শাখায় অভিযান চালায় করে। প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় মূসক সংক্রান্ত তথ্যাদি জব্দ করে আনে। এসব দলিলাদি যাচাই-বাছাই শেষে শীঘ্রই ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হবে।

ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্যমতে, কুমিল্লা শহরের অনেক মার্কেট রয়েছে যেগুলোর প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। জরিপে প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য যেমন দোকানের মাসিক ভাড়া, কর্মচারীর মাসিক মোট বেতন, মাসিক বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি টার্নওভারের বিবেচনায় নিবন্ধনযোগ্য হলেও এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন ব্যতিরেকে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ফলে ক্রেতারা ভ্যাট পরিশোধ করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  অর্ধশতকের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের ধানের ফলন

জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য এনবিআরের কাছে মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা এবং দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। একইসঙ্গে যথানিয়মে ও সঠিক পরিমাণ ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি করা। ইতোমধ্যে মার্কেট দুটোতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহ মূসক নিবন্ধন গ্রহণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও টার্নওভারের বিবেচনায় সঠিক করদায়িতা নিরূপণপূর্বক যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন