শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিটল পোকা চাষে করে স্বাবলম্বী উদ্যোক্তারা

বিটল পোকা চাষে করে স্বাবলম্বী উদ্যোক্তারা

প্রথমবারের মতো এবার বরিশালেও বিটল পোকার চাষ শুরু হয়েছে। এর আগে কেউ আর বিটল পোকার চাষ করেনি। এজন্য তার এই খামার দেখতে আসছেন অনেকেই। এই পোকা চাষে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন । এতে করে মাছ, মুরগী, গরু ছাগলের খাবারের খরচ অনেকটা কমে যাবে বলে দাবী বিটল পোকা চাষীরা । যে কারণে ইতিমধ্যেই বিটল পোকা চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ।

বিটল পোকা প্রথম আবিষ্কার করে ইসরায়েল। তারপর চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এটির চাষাবাদ শুরু হয়। এটি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের কাঠপোকার মতো। তবে পার্থক্য এটাই যে এ পোকা উড়তে পারে না। তাই এই পোকা বাড়ির যেকোন জায়গায় সহজে লালন পালন করা যায়। এই পোকা হাঁস, মুরগি ও কবুতরকে সরাসরি খাওয়ানোর পাশাপাশি সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে পাউডার তৈরী করেও হাঁস-মুরগিকে খাওয়ানো যায়।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খামার থেকে প্রতি কেজি বিটল পোকার পাউডার ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এটি সারাদেশে ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এখনো শুরু হয়নি।

জানা যায়, দুবছর আগে বরিশালের দুই উদ্যোক্তা পিটার গোমেজ ও অপু গোমেজ বরিশাল শহরে বিটল পোকার চাষ শুরু করেন। তাদের খামার দেখে বরগুনার একজন মাহবুবুল আলম মান্নুও তিনমাস আগে ১ হাজার পোকা নিয়ে বরগুনাতে পরীক্ষামূলক খামার শুরু করেছেন। এই পোকা আট মাস পর্যন্ত ডিম পাড়বে। এই ডিমই লার্ভা। একটি লার্ভায় প্রায় ৮০টি ডিম থাকে।

আরও পড়ুনঃ  কলায় ভাগ্যবদল

সরেজমিনে, বরিশালের পুলিশ লাইন আমবাগান এলাকায় অপু গোমেজের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি তার নিজস্ব বেডরুমেই এই পোকার চাষ করছেন। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই তিনি ও তার ভাই পিটার এই বিটোল পোকার চাষে মনযোগী হয়েছেন। তার ঘরে থরে থরে সাজানো বাক্সে কোনোটিতে লার্ভা, কোনটিতে শুটকিট। এই পোকা আটমাস পর মারা যায়। এই আটমাসে লক্ষাধিক ডিম দিয়ে যায়।

খুব কম খরচে এবং খুব সহজেই অভিনব পদ্ধতিতে বিটল পোকার চাষ করা যায় এবং বিটল পোকায় আছে ৪০-৭০% প্রোটিন। এই পোকা চাষে কোনো ময়লা ও দুর্গন্ধ হয় না বলে জানান বরিশালের উদ্যোক্তা চাষী অপু গোমেজ।

তিনি বলেন, এই পোকা আপনার হাঁস, মুরগী, কোয়েল পাখি, লাভ বার্ড ও মাছের খাদ্যে প্রোটিন এর চাহিদা পূরণ করবে। বর্তমানে মৎস্য, পোল্ট্রি ও হাঁস-মুরগি পালনের খাদ্য ব্যয় ও রোগবালাই অনেক বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি খামারের ৮০ ভাগ ব্যয় হচ্ছে খাদ্যের পেছনে।

অপু গোমেজ বলেন, গুণগতমান সম্পন্ন খাদ্যের ব্যাপক সংকট রয়েছে। উচ্চমূল্যে পোল্ট্রি খাদ্য কিনতে হচ্ছে। মূলত এজন্যই অধিকাংশ খামারিদের প্রায়ই লোকসান গুণতে হয়। তবে এখন আর হাঁস, মুরগি, কবুতর, পাখি ও মাছের প্রোটিনের অভাব নিয়ে কারো চিন্তা নেই। খুব কম খরচে সহজেই এখন বিটল পোকার চাষ করা যাচ্ছে। আমি আমার খামারে এখন এই বিটল পোকাই বেশি ব্যবহার করছি।

তিনি আরও বলেন, বরগুনার মান্নুও আমার থেকে কিছু বিটোল পোকা কিনে নিয়ে সে এখন সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। আমি ঢাকার এক ব্যবসায়ীর থেকে ৩০ টাকা দরে প্রথম লার্ভা কিনে এনেছিলাম। আজ আমার কাছে নিজের খামারে ব্যবহারের পরও ২৫ হাজারের বেশি বিটোল পোকা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  স্টার অ্যাডহেসিভে কিউআইও অনুমোদন

অপু গোমেজের এই চাষাবাদ সম্পর্কে বরিশালের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শওকত ওসমান বলেন, বরিশালে বিটল পোকার চাষ একটি আনকোরা উদ্যোগ। দেশীয় খামারিদের জন্য এ পোকার সরাসরি চাহিদা এখনও তৈরী হয়নি। ভালো বাজার তৈরী হলে বিভিন্ন খামারের খাদ্য-পুষ্টি চাহিদায় বিটল পোকা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিকট পোকা চাষীদের সাথেও অন্য উদ্যোক্তাদের পাশে সব সময় কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যহত রয়েছে ।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন