শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএমই ঋণে হতাশা

এসএমই ঋণে হতাশা
  • ২০০০ কোটি টাকায় বিতরণ ১৯২ কোটি
  • অভাব আর্থিক-নীতি সহায়তার
  • কাজে লাগছে না দক্ষতা-সম্ভাবনা

ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমইদের অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভবনা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। রাজধানী ঢাকার মতিঝিলস্থ ডিসিসিআই এর কার্যালয়ে অনষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বড় শিল্পখাতকে সহযোগিতা প্রদান এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও আর্থিক এবং নীতি সহায়তার অভাবে এখাতের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আর্থিক খতিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক নথিপত্রের ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের সিএমএসখাতের উদ্যোক্তারা প্রায়ই ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এমতাবস্থায় তাদের প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা একান্ত জরুরি।

রিজওয়ান রাহমান জানান, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের সনামধন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠাানের ঋণ প্রাপ্তির তথ্যসমূহের সন্নিবেশনের মাধ্যমে ঢাকা চেম্বার ‘সিএমএসএমই ঋণ প্রাপ্তির পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে। যেটি এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কোভিড মহামারী পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপিত নানাবিধ অবরোধের কারণে গোটা পৃথিবীর সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে।
আবু ফারাহ মো. নাসের জানান, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করলেও আজ পর্যন্ত সেখান থেকে বিতরণ হয়েছে মাত্র ১৯২ কোটি টাকা, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে ঋণ প্রাপ্তির এ হার বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোকে আরো সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো প্রতিষ্ঠানিকীকরণ করার উপর জোরারোপ করেন।

আরও পড়ুনঃ  ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ

ডেপুটি গভর্নর আরো বলেন, ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সেবা এবং উৎপাদনশীল খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে পণ্যের উৎপাদন হ্রাসের মাধ্যমে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধিতে ব্যাংকসমূহের এজেন্ট ব্যাংকিং-এর চেয়ে ‘উপ-শাখা’ কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পরিমাণ হ্রাস পাবে।

এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তির প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’ এবং ‘ব্লক চেইন’ কার্যক্রমের উপর বেশি হারে মনোনিবেশের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯টি ক্লাস্টারকে নির্বাচন করে দিয়েছে এবং দেশের ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে উক্ত ক্লাস্টার ভুক্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, দেশের সিএমএসমএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ স্থাপনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করেছে।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) মো. জাকের হোসেইন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার পৃথকভাবে দুটি মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. জাকের হোসেইন বলেন, বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ এবং ২০২৪ ও ২০২৭ সালে এটি যথাক্রমে ৩২ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ উন্নীতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এখাতের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এখাতের কোনো উদ্যোক্তা যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমেত ঋণ আবেদন করলে, ঋণ মঞ্জুরে ব্যাংকসমূহের পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি মতো প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  দামে নেই বাড়াবাড়ি

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ‘বিবিএস ইকোনোমিক সার্ভে ২০১৩’ অনুযায়ী দেশে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তার সংখ্যা ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংই ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা হতে বঞ্চিত, এখাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত ধ্যাণ-ধারণার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এছাড়াও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন