কুড়িগ্রামের উলিপুরে আড়ৎদার থেকে ভোক্তার ব্যাগ পর্যন্ত সবজি পৌঁছেতে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে যায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। কোন কোন সবজিতে খুচরা বাজারে এই দাম বৃদ্ধির পরিমান ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
সবচেয়ে লাগামহীন কাচা মরিচের দাম। আড়ৎদার কেজিপ্রতি মরিচ বিক্রি করছেন ১৬০ টাকা, খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ২২০ টাকা। নানা ভাবে সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সারা বছর জুড়ে অন্যান্য জেলা থেকে সবজি আমদানী করতে হয়।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (১৭ আগষ্ট) দুপুরে উলিপুর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারদের কাছে বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ২৮টাকা তা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৪০টাকা, শশা ২৫টাকা খুচরায় ৩৫টাকা, ঢেরশ ৩০ টাকা খুচরায় ৪০টাকা, মুখিকচু ৪০ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ১৮টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা খুচরায় ২২০টাকা, করলা ৬০টাকা খুচরায় ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৩২ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা, পিয়াজ এলসি ৪৪ টাকা খুচরা ৫০ টাকা, দেশি পিয়াজ ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, পেপে ২৪ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, পটল ৩৪ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা, রসুন ১৮০ টাকা খুচরায় ২২০, আদা ১৮০ খুচরায় ২০০, শুকনা মরিচ ৪১০ টাকা খুচরায় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার সাতদরগাহ এলাকার কৃষক সাইদুল ইসলাম ও সাজু মিয়া বলেন, আমরা বাজারে পটল নিয়ে এসেছি। এবারে পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা প্রতিকেজি পটল ২৪ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজারের পটলের চাহিদা থাকায় আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি।
পশ্চিম হারুনেফড়া এলাকার কৃষক কয়ছার আলী জানান, প্রায় ৫০ শতক জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কচুর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। বাজারে আজ প্রতিকেজি মুখিকচু ৪০টাকা দরে বিক্রি করেছি।
খুচরা সবজি বিক্রেতা আমজাদ হোসেন (৪৫), আব্দুর রহিম (৩৬) ও আলম মিয়া (৩৯) জানান, আমরা পাইকারী দামের চেয়ে সামান্য লাভ করেই সবজি বিক্রি করে থাকি। সবজির বাজার বৃদ্ধি পেলে ক্রেতারা ক্রয় করতে চায় না। চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করে থাকেন।
খুচরা বাজারে সবজি নিতে আসা গৃহবধু স্বপ্না আক্তার (২৫), হামিদা খাতুন (২৬) ও কাইয়ুম সরকার (৪২) বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে আজ সবজির কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পটল ৩০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৪০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা ৩০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাচা মরিচের। গত সপ্তাহে ১৪০ টাকা কেজি থাকলেও আজ নিতে হচ্ছে ২২০ টাকা দিয়ে। গত বছরের এই সময়ে সবজির দাম অনেক কম ছিল। কিন্তু এ বছর সবজির দাম দ্বিগুন। কোন কোন সবজি দাম তার থেকেও বেশি।
সবজি বাজারের আড়ৎদার মজুর উদ্দিন (৬২), শামীম ইসলাম (২৫) ও মান্নান মিয়া (৩৫) বলেন, চাহিদার তুলনায় আমদানী কম থাকায় সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়ভাবে সবজি আমদানী হলে তখন সবজির দাম কিছুটা কম থাকে। কিন্তু আমাদের এলাকায় ধান, পাট, ভ্ট্টুা বেশি চাষাবাদ করা হয়। এ কারনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে সবজি নিয়ে আসতে হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও থেকে। তারা আরও বলেন, ওই জেলার মোকাম (পাইকারী বাজার) গুলোতে সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানে আমদানী কমে যায় ফলে দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া গাড়ি ভাড়ার উপর কিছুটা দাম কম বেশি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় স্থানীয় ভাবে সবজির উৎপাদন কমে যায়। এ কারনে সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়।