শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়কের পাশে লাভের সবজি

সড়কের পাশে লাভের সবজি
  • পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ বাড়তি আয়

সবজিভাণ্ডার খ্যাত শেরপুরের নকলা উপজেলায় সড়কের পাশে পতিত জমিতে শাকসবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় তারা সবজি চাষ করেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান, ঘুচছে বেকারত্ব। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সড়কের ভাঙ্গনরোধ, পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ বাড়তি আয় ও মৌসুমি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বর্দী, পাঠাকাটা, টালকী, চরঅষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার প্রায় সব কাঁচাপাকা সড়কের পাশে শীতকালীন শাকসবজির চাষ হয়েছে। বিশেষ করে নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়ক, নকলা থেকে কলাপাড়া, শিববাড়ী ও শেরপুর, নারায়নখোলা থেকে চন্দ্রকোনা, গনপদ্দী থেকে ভুরদী ছাল্লাকুড়া এসব পাকা সড়কের পাশে পতিত জমিতে শিম, বেগুন, করল্লা, চিচিঙা পুঁইশাক, টমেটো ও লাউসহ বিভিন্ন জাতের প্রচুর মৌসুমি শাকসবজির চাষ হয়েছে। তা ছাড়া গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের দুইপাশের পতিত জমিতেও শাকসবজি চাষের কোনো কমতি নেই।

সড়কের পাশের পতিত জমি ঢালু হওয়ার কারণে এখানে পানি জমে থাকে না। তাই এসব জমি সারাবছরই শাকসবজি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সামান্য পরিচর্যাতেই এখান থেকে প্রচুর শাকসবজি উৎপাদন করা যায়। যা দিয়ে একটি পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে কৃষকের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে।

বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বানেশ্বর্দী গ্রামের শামীম আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, ভুরদী ছাল্লাতুলা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও কলেজ শিক্ষার্থী তমিজ উদ্দিন, পোলাদেশী গ্রামের করিম মিয়া, বানেশ্বর্দী খন্দকার পাড়া গ্রামের মোকলেছুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, কামাল মিয়া, কমল মিয়া ও বেলাল হোসেন, পাঠাকাটা ইউনিয়নের পাঠাকাটা গ্রামের সেলিম রেজা ও মিলন শেক, চরঅষ্টধর ইউনিয়নের সামছুল হক, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের হেলেনা বেগম, গনপদ্দী ইউনিয়নের গণপদ্দী গ্রামের ছাইদুল ইসলাম, টালকী ইউনিয়নের টালকী গ্রামের আসলাম উদ্দিন ও আক্তার আলী, পৌরসভার লাভা মহল্লার রিপন মিয়া, জালালপুর মহল্লার আলাল মিয়া ও শামীম হোসেনসহ অনেকেই সড়কের পাশে পতিত জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষ করেছেন। বর্তমানে এসব শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে খুব কম খরচে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও প্রতিটি পরিবারের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে বাড়তি আয় হবে।

আরও পড়ুনঃ  বন্যায় ১০৮ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি ফরিদপুরে

বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের ভুরদী খন্দকারপাড়া এলাকার কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. ছাইয়েদুল হক জানান, আমরা সড়কের পাশে পতিত জমিতে লাউ, ঝিঙা, শিম, টমেটো, করল্যা, পুঁইশাক, চিচিঙা ও বেগুনসহ নানাধরণের শীতকালীন শাকসবজির চাষ করেছি। এতে এলাকার কৃষকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বে এ কাজে কৃষকের সংখ্যা কম থাকলেও স্বল্প খরচে ভাল মুনাফার কারণে এখন তা অনেক বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি জানান, উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার সড়কের পাশে বছরে অন্তত দুইবার শাক-সবজি চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন জাতের কালাই চাষ করেও সুফল পাচ্ছেন কৃষক।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে শাকসবজির উৎপাদন বাড়ানো খুবই জরুরি। বাড়ির পাশের এক টুকরা জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে জন্য আমরা কৃষাণ-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে শাকসবজির বীজ। নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাপাকা সড়কের পাশে পতিত জমিতে কৃষক শাকসবজির চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি শাকসবজি বাজারে বিক্রি করে ভালো একটা আয়ের ব্যবস্থা করছে বিষয়টি কৃষির জন্য খুবই ইতিবাচক।

সংবাদটি শেয়ার করুন