বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোরো বীজতলা রক্ষায় মরিয়া উত্তরের কৃষক

  • ঘনকুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতি

রোপা আমন ধানের কাটা-মাড়াই শেষ হতে না হতেই রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বোরো আবাদের প্রস্তুতি নেয়। ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সের চারা রোপনের লক্ষ্য নিয়ে চলে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। জমিতে লাগানো আলু, সরিষা, তামাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি উত্তোলনের পর সেখানে রোপন করা হয় ধানের চারা। কিন্তু চারা রোপনের এ সময়টাতে ঘন কুয়াশাসহ বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে এই অঞ্চলে। গত তিনদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় উঠতি আলুসহ বিশেষ করে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তবে ঘন কুয়াশার কারণে যাতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে জন্য তারা বিভিন্ন কৌশলের পাশাপাশি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন বোরো ধানের বীজতলা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে যেন জমি তৈরি, চারা রোপনসহ বোরো ধানের বীজতলা তৈরির ধুম পড়েছে। অনেকে রবি ফসল হিসেবে চাষ করা সরিষা, আলু, গম ও তামাক উত্তোলনের পর ওই জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে জন্য কৃষকরা বীজতলা তৈরি করছেন। কিন্তু কুয়াশাসহ আবহাওয়ার বৈরি আচরণে তাদের শঙ্কা কাটছে না। তাই বীজতলা রক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের বেলা কেউবা বীজতলা পানিতে ডুবিয়ে রাখছেন, পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কেউ কেউ। আবার কেউবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে চারা রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে বিগত বছরগুলোতে ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চলতি বছর সচেতন চাষিরা কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।

আরও পড়ুনঃ  লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষা চাষ

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দুন্দিবাড়ি এলাকার চাষি ফোরকান আলী জানান, কয়েকদিন আগে তিনি ৬০ কেজি ধানের বীজতলা করেছেন। এখন কুয়াশার কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি সকাল-সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। তিনি বলেন, ‘বীজতলা নষ্ট হইলে চারা কিনি (ক্রয় করে) জমি গাড়া (চারা লাগানো) সম্ভব হবার নয়। তাছাড়া নতুন করি আর বীজতলায় চারা তৈরি করারও সময় মিলবে না।’ রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ঠাকুড়াদহ এলাকার চাষি আব্দুর সবুর জানান, এক দোন (২৪ শতক) জমির জন্য চারা কিনতে দাম পড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বীজতলা নষ্ট হলে দাম আরও বেড়ে যাবে। তাই তিনি জমিতে রোপণ না করা পর্যন্ত বীজতলায় চারার পরিচর্যা অব্যাহত রাখছেন। আলু উত্তোলনের পর যারা ওই জমিতে বোরো আবাদ করবেন তারা ইতোমধ্যে চারা রক্ষায় শুকনো বীজতলা করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় পাঁচ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। এজন্য এক হেক্টর জমির বীজতলা দিয়ে ২০ হেক্টরে চারা লাগানো গেলেও কমপক্ষে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা করা প্রয়োজন। চাষিরা ইতোমধ্যে বীজতলা করেছেন উল্লেখ করে সূত্র জানায় বৈরি আবহাওয়ার হাত থেকে বীজতলা রক্ষায় আগে থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভালো ফলনের লক্ষে ভালোমানের চারা তৈরিতে সাধারণ বীজতলার পাশাপাশি আদর্শ বীজতলা ও শুকনো বা পলিথিনে ঢাকা বীজতলা করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

আরও পড়ুনঃ  দুশ্চিন্তা কাটছেনা সুনামগঞ্জের কৃষকদের

এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলে কৃষির জন্য বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই আগে থেকে বিশেষ করে চাষিদের বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, আক্রান্ত বীজতলা পানি দিয়ে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা এবং প্রয়োজনে চারার মধ্যে জমানো শিশির কঞ্চি অথবা শক্ত কিছু দিয়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাছাড়া রোদ উঠলে বীজতলা সজিব হয়ে উঠবে। আগে থেকে সতর্কাবস্থা অবলম্বন করতে পারলে বোরো বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মাহবুবার রহমান জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি  সেলসিয়াস বা তার কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। এ পরিস্থিতি বীজতলার জন্য ক্ষতিকর। কাজেই শৈত্যপ্রবাহ থেকে বীজতলাকে রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, পানিতে ডুবিয়ে রাখা ও সালফারযুক্ত ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বীজতলায় জিপসাম ও ইউরিয়া দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন