শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদক ব্যবসা ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা

মাদক ব্যবসা ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা

ঠাকুরগাঁও জেলার পরিচিত একটি নাম মাজেদ। তিনি জেলা সদরের রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। একসময় জেলার মানুষ তাকে নামকরা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিনলেও এখন তার পরিচয় একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রমে যেকোনো অবস্থায় সুন্দর ও সফল জীবনের উদাহরণ এ মানুষটি।

একজন মাদক ব্যবসায়ী থেকে সফল উদ্যোক্তা হবার পথচলা নিয়ে কথা হয় মাজেদের সাথে। তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় এক সময় নিষিদ্ধ ফেন্সিডিল ব্যবসায় শুরু করেন তিনি। নিজের পরিচিতি থাকায় এবং তার অবস্থান শহরের নিকটে হওয়ায় খুব দ্রæতই ফেনসিডিল বিক্রি বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে জেলার সবচাইতে বড় মাদক বিক্রিতা বনে যান। তবে এ নিষিদ্ধ ব্যবসার কারণে মাদক মামলায় পড়তে হয় তাকে। ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মামলার সংখ্যা। একপর্যায়ে মাজেদ ১২টি মামলার আসামি হয়ে যায়।

তবে এক সময় মাজেদ বুঝতে পারেন যে, এ ব্যবসা থেকে অনেক টাকা আয় হলেও মামলা চালাতে গিয়ে আয়ের বড় অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। তার সাথে সর্বদা আতংক আর অশান্তির জীবন তাকে অস্থিরতায় ফেলেছে। সমাজের মাঝেও তিনি খারাপ একটি পরিচয় বহন করায় মানুষ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সমাজের প্রতিটি উৎসব ও আচার অনুষ্ঠানে তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন। তাই তিনি এ মদক জগৎ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার মাথার উপর ঝুলে থাকা ১২টি মাদক মামলা আর সমাজের অগ্রহণযোগ্যতা তার পিছুটান হয়ে দাঁড়ায়।

মাজেদ বলেন, আমি মাদক ব্যবসার ছাড়তে চাইলেও পারছিলাম না। পরে একসময় আমাকে আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান ডেকে পাঠায়। এ নিষিদ্ধ ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমার সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরি। তিনি প্রতিটি সমস্যায় তার সর্বাধিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় মাদক ব্যবসা ছেড়ে একটি বয়লার মুরগীর খামার দিয়ে পথচলা শুরু করি।

আরও পড়ুনঃ  কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কারে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্য!

বয়লার খামারে সফলতার বিষয়ে মাজেদ বলেন, প্রথমে একটি মুরগীর খামারে বয়লার পালন শিখি। তারপর অল্প পুঁজি নিয়ে ছেট আকারে খামার প্রকল্প শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে দেড় হাজার বয়লার মুরগী পালিত হচ্ছে।

মাজেদ বলেন, এখনও আমার ৫টি মাদক মামলা ঝুলে আছে। কয়দিন পর পর আদালতে হাজিরা আর উকিলের পিছনে টাকা খরচ আমার জন্যে অনেক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবে যদি এ মামলাগুলো থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর সরকারিভাবে সহযোগিতা পাই তাহলে আমি ব্যবসায় আরও প্রসার করতে পারবো। সেই সাথে অন্যান্য তরুণদের বয়লার মুরগী পালনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাই। আমি চাইনা আর কেউ আমার মতো ভুলপথে পা বাড়াক।

রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাদেকুল বলেন, এক সময় এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা এলাকার পরিচয় দিতে লজ্জা পেতো। মাদক এলাকা নামেই এর পরিচয় পেয়েছিলো। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে পারতাম না। তবে এখন আমরা বেশ ভালো আছি, শান্তিতে আছি।

মাজেদকে নিয়ে কথা হয় তার প্রতিবেশী রোহান রাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় মাজেদের কারণে নিজেদের সন্তানের বিপথে যাওয়ার আতংকে থাকতাম। মাজেদ থেকে দুরে রাখতাম। কিন্তু এখন আমাদের সন্তানদের সেই মাজেদকে দেখিয়েই অনুপ্রেরণা জাগাই। মাজেদ যদি তরুণদের নিয়ে কাজ করে তাহলে আমরা অবশ্যই অনেক উপকৃত হবো।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, মাজেদের মাদক ব্যবসার কারণে আমাদের এলাকাটা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছিলো। ইউনিয়নের মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে বার বার অভিযোগ জানায়। আমি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ মাদক কারবার নির্মূলের সিদ্ধান্ত নেই। আমি চেয়েছিলাম মাজেদ এ নিষিদ্ধ ব্যবসা ছেড়ে ভালো পথে ফিরে আসুক। তাকে জেলে দিয়ে লাভ নেই। বের হয়ে আবারো ব্যবসা শুরু করবে। তাছাড়া ছেলে হিসেবে সে বেশ ভদ্র ছিলো। তাই তাকে বুঝিয়ে ও সহযোগীতা করে একটি বয়লার খামার শুরু করাই।

আরও পড়ুনঃ  নড়াইলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান সংগ্রহ করে অনলাইনে ক্রয় প্রশাসনের

ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের সামসুজ্জামান বলেন, মাজেদের বিষয়টি শুনে বেশ ভালো লাগলো। ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রশাসন তাকে সহযোগীতার জন্য সব সময় পাশে থাকবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন