বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার লাখ ইঁদুর মেরে জাতীয় পুরস্কার

বিচিত্র এ পৃথিবীতে নানারকম মানুষ রয়েছে। জয়পুরহাটের আনোয়ার হোসেনও এমনি একজন বিচিত্র মানুষ। তিনি গত ২৫ বছর ধরে প্রায় ৪ লাখ ইঁদুর নিধন করছেন। এরই স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

জানা যায়, আনোয়ার হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ভট্টপলাশী গ্রামে। শখের বসে প্রথম ইঁদুর মারা শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। ইঁদুরের কাটা লেজ জমা দিয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পান পুরস্কার। তাকে এলাকার সবাই এখন ইঁদুর আনোয়ার নামেই ডাকে। ইঁদুর মেরে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এখন ইঁদুর মারাকে তিনি পেশা ও নেশা হিসেবে নিয়েছেন।

আনোয়ার হোসেন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ বছর আগে যুবক বয়সে একদিন ধানের জমির মধ্যে থাকা ইদুরের গর্ত থেকে ধান বের করেন অনোয়ার। পরে সেই ধান মুড়ি বিক্রেতার নিকট দিয়ে মুড়ি নেন। এরপর প্রায়ই তিনি ধানের জমিতে থাকা বিভিন্ন গর্ত থেকে ইঁদুরের লুকিয়ে রাখা ধান সংগ্রহ করেন এবং তা পরে বিক্রি করেন। এ সময় যেসব ইঁদুর গর্ত থেকে বের হতো তাদের ধরে মেরে ফেলেন। একদিন কৃষি কর্মকর্তা তাকে মরা ইঁদুরের লেজ স্থানীয় কৃষি অফিসে জমা দিতে বলেন। ইঁদুরের শতাধিক লেজ জমা দেয়ার পর তাকে কিছু গম ও চাল সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। তারপর থেকে আনোয়ার ইঁদুর মারাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। দুই সন্তানের জনক আনোয়ার হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই আছেন।

আরও পড়ুনঃ  নওগাঁয় কিংবদন্তী জহির রায়হান এর ৩৯তম অন্তর্ধান দিবস পালিত

স্বামীর এসব কাজে সবসময় পাশে থেকে সহায়তা করেন তার স্ত্রী রুবি বেগম। তাদের সংসার ভালই চলছে। এছাড়া বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়ায় তিনি নিজেকে ও পরিবারকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। ২৫ বছর ধরে ইঁদুর মেরেছেন প্রায় ৪ লাখ। ২০০৪ সালে ২৩ হাজার ৪৫১টি ইঁদুর মারার জন্য পান জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার।

আনোয়ার এলাকার ৫৭ জনকে ইঁদুর ধরা ও মারার কৌশল শিখিয়েছেন। এখন তারা যেকোন কৃষক ডাকলে সাড়া দেন এবং তাদের ইঁদুর ধরেন। বিনিময়ে তারা যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে সংসার খরচ চালান। সবাই তাকে ইঁদুর মারার ওস্তাদ হিসেবেই মানেন। জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলার অনেককেই তিনি এ শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থকে এসে তার কাছে কিভাবে একাজ করতে হয় তা হাতে-কলমে দীক্ষা নেন।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন জানান, দেশের কৃষকের ফসল রক্ষার্থে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান। এ অভিযানে এ পর্যন্ত একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তার মতো আরো আনোয়ার প্রতিটি জেলায় জেলায় তৈরি হলে কৃষকের ফসলহানীর পরিমান অনেকাংশে কমে যেত। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবসময় তার সঙ্গে আছে এবং আগামীতেও পাশে থাকবে।

উদ্ভিদ সংরক্ষরণ ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক ড. মো. আবু সাঈদ জানান, দেশে ফসলের বড় শত্রæ ইঁদুর। রোপা আমন ও গম ফসলের থোড় অবস্থায় ইঁদুরের আক্রমন হয় বেশি। প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ নষ্ট করে ইঁদুর। ইঁদুর রোগ ছড়ায় মানুষ ও পশুপাখির মাঝে। ৬০ প্রকার রোগ জীবানুবাহক ও বিস্তারকারী ইঁদুর। এছাড়া বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, পোশাক, বিছানাপত্র, কাগজ, মূল্যবান দলিল, লেপ তোষক কেটে ক্ষতিসাধণ করে থাকে। ইঁদুর বছরে ৬ থেকে ৮ বার এবং প্রত্যেকবার ৩ থেকে ১৩টি বাচ্চাদেয়। দেশে বৎসরে ৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য নষ্ট করে ইঁদুর।

আরও পড়ুনঃ  ঐতিহ্যের আলো ছড়ালো রংপুরে নবান্ন উৎসব

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন