বাঁশখালী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাঁশখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে চলতি বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে ২৫৫০ হেক্টর এবং উফশী ধানের চাষ হয়েছে ৭২০০ হেক্টর। ৩৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাঁশখালী উপজেলায় সর্বমোট ৯হাজার ৭৫০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর পুরো উপজেলায় ৫৮হাজার মেট্রিক টন বোরোর ফলন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ এই করোনা ভাইরাসের মহামারিতেও কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আবাদ কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি ব্যাংকসহ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক আবাদ কার্যক্রম সফল করতে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় লোনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। এছাড়াও ইতিমধ্যে কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদেরকে কিছু রিপার (ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ করোনা ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থেকে কৃষকের সেবা দিচ্ছে। দেশের মধ্যে যেন কোন খাদ্য সংকট দেখা না যায় সেই জন্য কৃষকের জমি অনাবাদী না থাকে এমন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে বোরোর জমি ঘুরে দেখা য়ায়, বোরো ধানে বিলের পর বিল ছেয়ে গেছে। যতদূর চোখ যায় শুধু সোনালি ধানের শীষ। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে আধা পাঁকা ধানের শীষের সমারোহ। কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার আশায় বুক বেঁধেছেন চাষীরা। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত বৃষ্টি হওয়ার কারণে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
এ ব্যাপারে ছনুয়া ৫নং ওয়ার্ডের কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, “আমি ৭৫ শতক জমিতে ব্রি-ধান ৭৪ আবাদ করেছি। ক্ষেতে ফলন ভালো হলেও করোনা ভাইরাস ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া নিয়ে আমি শংকিত। যেকোনো সময় কালবৈশাখী কিংবা শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ফসল হানির আশংকা রয়েছে।”
এ বিষয়ে ছনুয়া ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উল্লাহ আনন্দবাজারকে বলেন, “লবণাক্ত এলাকায় বোরো চাষের জন্য ব্রি-ধান ৭৪, বিনা-১০ ও ব্রি-ধান ৬৭ এর আবাদ ভালো হয়। পোঁকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়। এই ধানের ভাতও ঝরঝরে হয়। আমরা কৃষকদেরকে ১সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি। শিলাবৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি দেখা যায়নি। তবে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে একটু সমস্যা হবে। করোনা বিপর্যয়ের এই সময়ে মোবাইলে ও সরাসরি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অফিস থেকেও এভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে।”
কথা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, “বাঁশখালীতে কোন বছর ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা যায়নি। চলতি মৌসুমেও এ সংকট দেখা দিবে না। কারণ, কিছুদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই লবণের শ্রমিকগুলো ধান কাটার জন্য কাজে আসবে। আমরা কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে রয়েছে। এখনো শতকরা ৮০ ভাগ ধান মাঠে রয়ে গেছে। আমরা সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলার জন্য।”
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি বিভাগ করোনা কালীন সময়েও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার কৃষি প্রনোদনার জন্য ও তিনি ধন্যবাদ জানান। তবে মাঠে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁদেরকেও ঝুঁকি ভাতা ও বীমার আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করেন। ৮০% ধান পেকে গেলেই কাটার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও কৃষি অফিসার জানান।
আনন্দবাজার/শাহী