শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরিষায় দুলছে কৃষকের রঙ্গিন স্বপ্ন

ঋতুর পালাক্রমে এখন শীতকাল। কাক ডাকা ভোরে বের হলেই চারদিকে কুয়াশার হাতছানি। শীতের আমেজের সাথে শোভা পাচ্ছে হলুদের হাসি। মাঘের ঝিরঝির হিমেল বাতাসে সেই ফুল আপন মনে দোল খাচ্ছে। ফুল ও ফুলের সুবাস মানুষকে করছে বিমোহিত । সেইসাথে ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা মৌমাছিও। মৌমাছি দলবেঁধে মাঠের পর মাঠ ছুটে বেড়াচ্ছে। এমন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার প্রতিটি মাঠে।

বিনামূল্যে বীজ সার বিতরণ, খরচ কম এবং বিক্রিতে ভালো দর পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ ঝুঁকছেন। এখন পযর্ন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষা ফলনে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর সরিষার আবাদ হয়েছিল ৫শ ৫০ হেক্টর। এ মৌসুমে ১০০ হেক্টর বেশী জমি রয়েছে। এ বছর সরিষা আবাদে প্রণোদনা হিসাবে সরকার ১৫শ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ করে। প্রণোদনার জমি রয়েছে ১৫শ বিঘা। এ উপজেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অনুকূল পরিবেশে এখানে কৃষকদের সময়োপযোগী উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানায়, এ উপজেলার বেশি ভাগ জমিতে কৃষকরা দুটি ফসল উৎপাদন করে থাকেন। পাশপাশি যদি সেই জমিতে আরো একটি ফসল সরিষা চাষ করা হয় তাহলে তিনটি ফসল উৎপাদন করা হবে। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছে,অপর দিকে পুষ্টিকর ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে। তাই সরিষা চাষ করতে কৃষকদের বিনামূল্য সরিষার বীজ ও সার দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ মৌসুমে বারি ১৪ ,১৭, বিনা ৮, ৯ ও ১০ সহ নানা জাতের চাষ করেনে। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে রাজস্ব বিভাগের প্রকল্পে প্রদর্শনী দেওয়া হয় ৩০টি। তারা আরো জানায়, আমন কাটা ও মাড়াইয়ের পর বেশীভাগ জমি নিচে ৩-৪ মাস পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার উপর। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৪-৬ মণ। সরিষার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছেন। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি বোরো চাষে খরচ করার পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে তাদের।

আরও পড়ুনঃ  চাষির সুদিন ফিরলো কুমড়ায়

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন উপজেলার মোগড়া মনিয়ন্দ ও ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে একাকার হয়ে আছে। যতদুর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ চোখে পড়ছে। চারদিকে বাতাসে দুলছে সরিষার ক্ষেত। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙ্গিন স্বপ্ন। সরকার কর্তৃক কৃষকদেরকে বীজ সার বিনামূল্যে বিতরণ করায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মৌ মাছিরা। মৌ মৌ শব্দে পুরো মাঠ মুখরিত হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশী লাভের আশায় স্থানীয় কৃষকরা অধিক ফলনশীল এই ফসলের আবাদ করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

পৌর এলাকার কৃষক মো. লিটন মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করছি। এ মৌসুমে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় ১ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। প্রথম দিকে বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হলেও পড়ে আর কোন সমস্য হয়নি। বর্তমানে সরিষার মাঠের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। সরিষা আবাদে খরচ কম ফলন বেশী হয়। তাছাড়া সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। ফলন ভালো হলে বিঘায় ৪-৫ মণের উপর সরিষা পাওয়া যায়। গত বছর সরিষা আবাদ করে দ্বিগুন লাভবান হয়েছি।

উপজেলার ধরখার এলাকার কৃষক মো: হোসেন মিয়া বলেন, এ মৌসুমে ১ বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি অফিস ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার দিয়েছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে বীজ, সেচ, সার, লাগানো, কীটনাশক কাটাসহ অন্যান্য খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু একই জমিতে সরিষা চাষ করতে মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতের মধ্যে সরিষার ফুলে ক্ষেত ভরে গেছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে ফুলে সরিষা আসবে। ফলন ভালো ও বাজারদর ভালো থাকলে এ চাষে লাভবান হবো।

আরও পড়ুনঃ  সবুজে দুলছে স্বপ্ন

কৃষক মো: শাহআলম বলেন, গত বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে ফলন ভালো হয়েছে। তাই এবার ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, সরিষা হলো একটি লাভ জনক ফসল। বেশীভাগ ক্ষেত্রে সরিষা চাষ ঝুঁকিমুক্ত। তবে প্রতি বছর সরিষা চাষের আবাদ বাড়ছে। কৃষি অফিস সব সময় ফলন ভালো করতে কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন সরিষা চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বিনামূল্যে বীজ-সার সরবারহসহ সর্বদা নানা রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। তৈল জাতীয় শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরিষা চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন