শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৭ শতাংশ থেকে ১০ বিঘা

হারুনের ভাগ্য ঘুরছে আমন চারায়

হারুনের ভাগ্য ঘুরছে আমন চারায়

পঞ্চাশোর্ধ কৃষক মো. হারুন মিয়া। তার পরিবারে স্ত্রী,৩ ছেলে ৩ মেয়েসহ ৮ জন সদস্য রয়েছে। বাড়ির জায়গা ছাড়া কৃষিকাজ করার অন্য কোন জায়গা নেই। জীবিকার প্রয়োজনে মৌসুমী ধান চারা বিক্রি আর ভ্রাম্যমান চা বিক্রিতে চলে তার সংসার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনি উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন ধানের বীজতলা তৈরী করেন।

ইতিমধ্যে চলছে আমন চারা বিক্রি। আমন ধান চারার মান ও জমিতে ফলন ভালো হওয়ায় ইতিমধ্যে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তার কাছ থেকে চারা ক্রয় করে জমি আবাদ করছেন। এখন কৃষকের কাছে তার চারাই যেন ভরসা। এ মৌসুমে তিনি ৫ লাখ টাকার উপর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। যাবতীয় খরচ বাদে তিন লক্ষ টাকার উপর আয় হবে। কৃষক হারুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকার বাসিন্দা। কৃষক হারুন মিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে জমি বর্গা (ইজারা) নিয়ে মৌসুমী আমন চারা বিক্রি করছেন। এ আমন মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমি (বর্গা) ইজারা নিয়ে উচ্চফলনশীল জাতের ৪০ মণ ধানের বীজতলা তৈরী করেন। এর জন্য প্রতি বিঘা জমিতে জমা দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। প্রতি ১বিঘা জমিতে ধান লেগেছে ৪ মণ। হালচাষ, জমা, (ইজারা) বীজ ধানসহ মোট প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার উপর। সব মিলিয়ে বীজতলা তৈরীতে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকার উপর। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ১২শ -১৩শ টাকায় বিঘা প্রতি আমন চারা বিক্রি করছেন। তিনি বলেন ১ বিঘা জমির বীজতলা চারা ৫০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হবে।

আরও পড়ুনঃ  জাওয়াদে চাঁদপুরে ৭৮৭২ হেক্টরের ফসলের ক্ষতি

ইতিমধ্যে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকরা তার সাথে যোগাযোগ করে আমন চারা ক্রয় করছেন। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় অনেকে এখান থেকে ক্রয় করে অন্য স্থানে বিক্রি করছেন। এ পযর্ন্ত তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার উপর আমন চারা বিক্রি করেছেন বলে জানায়। দু এক দিনের মধ্যে সব চারা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। সময়মতো যদি আমন চারা বিক্রি হয় তাহলে ধান ক্রয় জমি প্রস্তুত,জমি ইজারাসহ অন্যান্য খরচ বাদে ৩ লক্ষ টাকার উপর আয় হবে। তিনি আরো বলেন যে জমিতে বীজতলা তৈরী করা হয়েছে চারা বিক্রি শেষে পুনরায় সরিষা আবাদ করবেন। তিনি বলেন অবসরের বেশীভাগ সময় কাটে পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় চা বিক্রির মাধ্যমে। দৈনিক চা বিক্রি করে ৬শ থেকে ৭শ টাকার উপর আয় হয়।

কৃষক হারুন বলেন আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে মাত্র ৭ শতাংশ জায়গাতে প্রথমে বীজতলা তৈরী করা হয়। বিক্রিতে ভালো লাভ হওয়ায় এখন ১০ বিঘা জমিতে আমন চারা তৈরী করছেন। কম শ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে তার বীজতলা তৈরীর জমির পরিমান। বীজতলা বা চারা ভালো রাখতে কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমের পুরো দমে আমন আবাদ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা হাল চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুুত করে আমন চারা রোপনে এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছে ।

আরও পড়ুনঃ  দাগনভূঞায় এখনও দেখা মেলেনি মুকুলের, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

অতিরিক্ত বৃষ্টি ও নিচু জমিতে পানি থাকায় অনেক কৃষকরা আমন বীজতলা তৈরী করতে পারেন না। অনেক কৃষকের আমন আবাদ চারা কেনার উপর নির্ভর করতে হয় । ফলে এ মৌসুমে স্থানীয় পর্যায়ে আমন চারার কদর থাকে বেশী।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি সেচ ছাড়াই কৃষকরা আমন ধান চাষ করে থাকেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা আমন ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপনের কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সবুজ ধানের কচি চারায় ভরে উঠছে মাঠ। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার লোকজন খোঁজ খবর নিয়ে আমন ধান আবাদ করতে উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করছেন। উপজেলার ধরখারের নারী নোয়াগাও এলাকার কৃষক মো: ফরিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে তার তলিয়ে গিয়ে বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই জমি আবাদ করতে তারাগন এলাকার কৃষক হারুন মিয়ার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করা হয়। ১ বিঘা জমির চারা ১২শ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে বলে জানায়। গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও বিক্রিতে ভালো দর পাওয়ায় তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই আমন ধান আবাদ করে উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন। এ মৌসুমে তিনি ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেন। সেন্দাই শিলাউর এলাকার কৃষক রফিক মিয়া বলেন, গত ৩ বছর ধরে কৃষক হারুন মিয়ার কাছ থেকে আমন চারা ক্রয় করছেন। তার চারার মান খুবই ভালো। জমিতে ফলন ভালো হয়। এ পযর্ন্ত তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করছেন। কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, নিচু এলাকার জমি হওয়ায় আমন মৌসুমে তিনি বীজতলা তৈরী করতে পারেননি। তাই কেনা চারায় তিনি ধান আবাদ করছেন। গত কয়েক বছর ধরে হারুন মিয়ার চারা দিয়ে ধান চাষ করায় ভালো ফলন পেয়েছেন। তাই চারার জন্য আগ থেকেই তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। এ মৌসুতে তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে চারা ক্রয় করেন। গত মৌসুমে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ধানের চারা দিয়ে জমি আবাদ করায় বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ ধান পেয়েছেন বলে জানায়।

আরও পড়ুনঃ  দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আমন ধান আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকরা উচ্চফলনশীল নানা জাতের ধান চারায় জমি আবাদ করছেন। কৃষক হারুন আমন বীজতলা তৈরী করে জমি আবাদে কৃষকের ভালো সহযোগিতা করছেন। তার চারার মান খুবই ভালো রয়েছে। তিনি আরো বলেন শেষ পযর্ন্ত যদি আবহাওয়া অনকুলে থাকলে আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন