বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাঠে দুলছে চাষির স্বপ্ন

মাঠে দুলছে চাষির স্বপ্ন

উত্তরের হালকা বাতাসে উপকূলের পাকাধান ক্ষেতের শীষে দুলছে এখন কৃষকের স্বপ্ন। বাবুই, চড়ুই, ঘুঘু, কবুতরের পাশাপাশি কৃষকের গৃহপালিত মহিষ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী নতুন পাকাধান খাওয়ার আশায় হানা দিচ্ছে ক্ষেতে। ইতিমধ্যে সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে ধানের শীষ। অল্প ক’দিনের মধ্যেই পটুয়াখালীর কলাপাড়ার গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কর্মচাঞ্চল্য। এরপর সিদ্ধ করা ও রোদে শুকানোর পর নতুন ধান ঘরে তোলার মহোৎসব। তাই প্রতিটি কৃষক পরিবারের চোখে মুখে দেখা মিলছে অবারিত স্বপ্ন।

কলাপাড়া উপজেলার দু’টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে কৃষক পরিবার রয়েছে ৩৫৫০০। মোট জমি আছে ৪৯২১০ হেক্টর। চলতি বছর ৩১২৪০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২২৫৫০ হেক্টরে মৌসুমি উফশী রোপা আমন ও ৮১৫০ হেক্টর জমিতে মৌসুমি স্থানীয় রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। এছাড়া সবজি চাষ করা হয়েছে ৫৪০ হেক্টর জমিতে। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়’র প্রভাবে ধানের ক্ষেত আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার পরিমাণ ৯২১ হেক্টর। এছাড়া ৫৪ হেক্টর সবজি ক্ষেতের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ জুড়ে সোনালি ধানের ক্ষেত। চাষাবাদের মৌসুম শেষে কৃষকের পরিশ্রমের পাকা ধান এবার ঘরে তোলার পালা। তাই ধানকাটার জন্য নতুন কাঁচি তৈরী করতে দিয়েছে অনেকে। কেউ আবার পুরাতন কাঁচি মেরামত করাচ্ছে কামার বাড়িতে। হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার জন্য আগাম বায়নাও দিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। এছাড়া অনেকেই ধান রাখার জন্য বাড়ির আঙিনা সুন্দরভাবে পারিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। এখন কৃষকের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। তবে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের আনাগোনা আর তৎপরতায় ফসলের কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৬ কেজিতে ফড়িয়াদের ধানের মণ কেনার প্রতিবাদে মানববন্ধন সহ উপজেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে কৃষকরা।

আরও পড়ুনঃ  তলিয়ে যাচ্ছে পাট, দিশেহারা কৃষক

স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগে প্রতি ২৬৬ শতক জমি চাষাবাদ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত খরচ হতো ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। চলতি বছর একই জমিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া বাজারের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মজুরিতেও শ্রমিক পাচ্ছেন না তারা।

উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলি গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষেতের তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। সার-ঔষধ প্রয়োগ ও ক্ষেতের নিয়মিত পরিচর্যা করে এ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে।

নবীপুর গ্রামের কৃষক স্বজল বলেন, প্রথম দিকে বৃষ্টি না থাকায় জমিতে চাষ করতে একটু দেরি হয়েছে। তার পরও এ বছর ক্ষেতের ফসল ভাল। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে দুই-চার দিনের মধ্যেই ক্ষেতের ধান কাটা হবে বলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআর সাইফুল্লাহ বলেন, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে এ উপজেলায় কৃষকদের আমন ধান ক্ষেতের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে কৃষকরা তা সুন্দর ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন