শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড্রাগন চাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

ড্রাগন চাষে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন

ড্রাগন। বিদেশি এই ফলের ব্যাপক চাহিদা শহরে এবং বাজারে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। একবিঘা জমিতে এ ফল চাষ করেছেন উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম। ছয় মাসেই ধরেছে ফল, এবার লাখপতি হবার স্বপ্ন। ড্রাগন চাষের মাধ্যমে ভাগ্যবদলাবে। এসএসসি পাস করা বেকার ছোট ভাইয়ের কর্মসংস্থান গড়ে দিয়েছেন বড়ভাই এহসান আলী। বড় ভাইয়ের বাগান ভেবেই দেখভাল করছেন আরিফুল।

প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কৃষিতে নির্ভর। নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামের কৃষক মৃত ইসমাইল প্রামানিকের চার পুত্র এবং তিন কন্যার মধ্যে সবার ছোট আরিফুল। বড়ভাই এহসান ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। মূলত, তার সহযোগিতায় আরিফুল নিজেদের আবাদি জমিতেই কর্মসংস্থান গড়েছেন। একবিঘা জমিতে এ প্রথমবার ড্রাগন আর পাশেই একবিঘা জমিতে পেয়ারা-বড়ই চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন।

বহু গুণে গুণান্বিত পুষ্টিকর ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস-জাতীয়, লতানো। তাই এ গাছ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। একটি খুঁটিতে চার থেকে পাঁচটি ড্রাগনচারা দেওয়া যায়। যেকোনো ফসলের চেয়ে ড্রাগন ফল চাষ এখন লাভজনক। ড্রাগন বাগানের সাথি ফসল হিসেবে নানা সবজি, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে বাড়তি আয় করা যায়।

চাষি আরিফুল ইসলাম জানায়, প্রথমে ইউটিউবে ড্রাগন চাষ পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হন দুই ভাই। পরে নাটোরের রাজাপুরে একটি বাগানে গিয়ে সরেজমিনে চাষ পদ্ধতি দেখেন। চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে নাটোরের বাগান থেকেই ৮শ পিস ড্রাগন চারা (কাটিং) ক্রয় করেন। প্রত্যেক চারা হলুদ ২০০ টাকা, লাল ৬০ ও সাদা ৬০ টাকা। একবিঘা জমি প্রস্তুত করতে ট্রাক্টর-ট্রিলার দিয়ে তিনটি হাল চাষ করেন।

আরও পড়ুনঃ  বেড়েছে ডিজেল-বীজের দর, দুশ্চিন্তায় কৃষক

সেসময় ইউরিয়া সার ২০ কেজি, ড্যাপ ২০ কেজি, পটাস ১৫ কেজি, দানাদার ৪ কেজি ও বরুন সার ৪ কেজি মাটির সঙ্গে মিশ্রন করে। পরে ২০০টি সিমেন্টের খুটির মাথায় টায়ারের গোল অংশ উপরে মাচা করে দেয়। চারা কাটিংয়ের অল্প অংশ শুকনা মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে লাগানো হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চারার গড়ালিতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ড্রাগন চাষে গত ছয় মাসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সার প্রয়োগ করেন কৃষক। প্রত্যেক খুটিতে ২০ গ্রাম করে দানাদার, ইউরিয়া, ড্যাব এছাড়াও জৈব সার দেওয়া হয়েছে। চারা বড় হওয়া শুরু করলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। পরে টায়ারের মাচায় উঠে গাছ বাড়তে থাকলে চারা (কাটিং) বিক্রয় শুরু করেন। এসময় ফল আসতে থাকে। তারকাঁটার বেড়া, খুঁটি বাঁধার জন্য শ্রমিক খরচসহ একবিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় দুইলাখ টাকা। গাছে ফল এসেছে, কাটিং চারা বিক্রি শুরু করেছে। বর্তমানে পোকা-মাকড়ের আক্রমন নেই। প্রথমবার ড্রাগন চাষেই ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন চাষি আরিফুল। তিনি বলেন, আমার বয়সী অনেক তরুণ-যুবকরা কর্মসংস্থান না পেয়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। তাদের জন্য একটি কর্মসংস্থানের পথ ড্রাগন চাষ।

থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন, শিক্ষিত তরুণ-যুবকরা তাদের কর্ম না থাকার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যায়। অপরাধে না জড়িয়ে অনেকে ড্রাগন, মালটাসহ বিভিন্ন ফসল চাষের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে তুলেছে। তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। বেকার যুবকদের অনুরোধ করছি, তারা যেন বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।

আরও পড়ুনঃ  শুঁটকি খাতের ৫৬ শতাংশ নারী শ্রমিক চর্মরোগে আক্রান্ত: সমীক্ষা

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আদনান বাবু বলেন, ড্রাগন অত্যন্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি ফল। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এ উপজেলায় ড্রাগনের আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন