শ্রমিক সংকটের কারণে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কৃষিতে বাড়ছে কম্বাইন হারভেষ্টার ও রিপার যন্ত্রের ব্যবহার। কায়িক শ্রমের পরিবর্তে এসব যন্ত্রের ব্যবহারে সময় কম ও সাশ্রয়ী মূলে ক্ষেতের ফসল কর্তন করে গোলায় তুলতে পেয়ে খুশি কৃষকরাও। শ্রমিক দিয়ে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে যেখানে ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হতো সেখানে এ মেশিনে খরচ হয় মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। একই সঙ্গে হয় ধান মাড়াই ঝাড়াই ও বস্তা। এতে বাড়তি কোনো খরচ ছাড়াই সহজেই ঘরে ধান তুলতে পারেন চাষি। তবে, চাহিদার তুলনায় মাঠে কৃষিযন্ত্র কম হওয়ায় অধিকযন্ত্র সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, কৃষিক্ষেতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করতে বিভিন্ন সময়ে মাঠ দিবসের মাধ্যমে এসব কৃষিযন্ত্র মাঠে প্রদর্শন করা হলে তা কৃষকদের আগ্রহী করে তোলে। আর এসব কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দেশের কৃষিখাতেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ, অপরদিকে কয়েকগুণ বেড়েছে উৎপাদন।
কৃষি অফিস আরও জানায়, কৃষক সংগঠন ও কৃষদের মাঝে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ও খামার যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সরকারি ভূর্তুকিমূল্যে ১৩টি কম্বাইন হারভেষ্টার, ১টি মিনি কম্বাইন হারভেষ্টার, ১টি রিপার ও ২ রাইস ট্রান্সপার যন্ত্র সরবরাহ করেন। প্রতিটি মেশিন দিনে ৮ থেকে ১০ একর জমির ধান কর্তন করতে পারে। ধান রোপনসহ চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে মাঠে ধান কর্তন কাজে ব্যবহার হচ্ছে এ কৃষি যন্ত্রগুলো। তবে ভূর্তুকিতে পাওয়া যন্ত্রগুলো কিনে প্রথম দিকে মালিকরা ধান কর্তনে কৃষকের সাড়া না পেলেও বর্তমানে এ যন্ত্রের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান।
উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম চৌধুরী শাহিন নিজের প্রয়োজনে সরকারি ভূর্তুকি মূল্যে একটি ইয়ামামা হারভেষ্টার কিনেন। প্রথম দিকে মানুষ দেখে আগ্রহী না হলেও চলতি বছর শ্রমিক সংকটের কারণে মানুষ হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কর্তন করতে আগ্রহী হয়েছেন। আওলাই ইউনিয়নের কেওতা গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হারভেষ্টার মেশিন নেওয়ার পর থেকে মাঠে ধান কর্তন করছি। শ্রমিকের বদলে কৃষক হারভেষ্টার মেশিনে ধান কর্তনে আগ্রহী হচ্ছে।
উপজেলার খোকশগাড়ী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, কষ্ট করে ধান ফলানোর পর কাটার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। তারপর যাদের পাই তারা প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে ৫/৬ হাজার টাকা মজুরি নেন। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে রাতারাতি সেই মজুরি ৮/৯ হাজারে ওঠে।
উপজেলা কুটুহারা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটার সেই ধান বাড়িতে নিয়ে ঝাড়াইসহ বস্তা করতে হয় এতে আরো বাড়তি খরচ হয়। তবে, হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে জমির ধান কর্তন, মাড়াই ও ঝাড়াই হয়ে বস্তা করে পাচ্ছি। সেটি কোনো ঝামেলা ছাড়াই আড়তে বিক্রি করা যায়। উপজেলার কেওতা গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটে আমাদের বিঘা প্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। হারভেষ্টার চালক আব্দুর রহিম জানান, এই মেশিনে ২০ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কাটাই, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তা করা যায়।
এবার উপজেলায় ৮৬ হাজার ৭শ ৩০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯ হাজার ৯শ ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান করা চাষ হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান,বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয় সেকারণে কৃষি যন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা অনেক ব্যয়হুল। সে তুলনায় হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা খরচ প্রায় অর্ধেক। এতে কৃষকরা অনেক খুশি। তিনি আরো বলেন, সরকারের ৫০% ভূর্তুকী মুল্যে কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রগুলি সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে উপজেলায় কৃষি যন্ত্রের চাহিদা অনেক বেশি। আগ্রহী কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কৃষি যন্ত্র সরবরাহ করে গোটা উপজেলা খামার যান্ত্রিকরণে মাধ্যমে কৃষকরা ধান রোপন, কর্তন করতে পারে সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কৃষি বিভাগ।
আনন্দবাজার/শহক