বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রমের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত লিচুকন্যারা

শ্রমের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত লিচুকন্যারা

ঈশ্বরদীর লিচু মোকাম ও লিচু আবাদি এলাকায় প্রতি বছর অসংখ্য চাষি ও ব্যবসায়ীর ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও লিচু উৎপাদন ও বিপণনে সরাসরি জড়িত হাজার হাজার নারীদের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয় না।

দেশের অন্যতম সেরা লিচু উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদীর লিচু উৎপাদন, বিপণন, লিচু চাষি ও শ্রমিকদের নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় সংবাদপত্র, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি হলেও লিচু উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ৩০ হাজার নারী ‘লিচুকন্যা’র সুখ-দুঃখের কথা কখনও ওঠে আসেনি কোথাও।

কয়েকদিন আগে ঈশ্বরদীর নওদাপাড়া, দাশুড়িয়া, দিয়াড় সাহাপুর, চররূপপুর, বরইচরা, জয়নগর প্রভৃতি এলাকায় এবারের লিচু আবাদের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গেলে সাংবাদিকদের কাছে এ আক্ষেপের কথা তুলে ধরেন দিনভর কঠোর পরিশ্রম করা এসব ‘লিচুকন্যা’রা।

মানিকনগর গ্রামের লিচু বাগানের মালিক সুমন আলী জানান, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে লিচু মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার নারী প্রত্যক্ষভাবে লিচু উৎপাদনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। এরা কেউ গৃহবধূ, কেউ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রী, আবার কেউ দিনমজুর। তারা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাগানে কাজ করেন। গত বছর নারীদের মজুরি ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এবার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০/৪০০ করা হয়েছে। সাথে সকাল-দুপুরে খাবার।

সোহাগী খাতুন জানান, লিচুর মৌসুম এলে বাড়ির কাজ ফেলে তারা সারাদিন বাগানে লিচু বাছাই ও গণনার কাজ করে বাড়তি আয়ে সংসারের খরচ জুগিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের তুলনায় এ টাকা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানান তিনি। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য এসব লিচুকন্যারা সারা বছরে মাত্র ১ মাস এ কাজ করার সুযোগ পায়। মধু মাসের ‘আদুরে ফল’ হিসেবে খ্যাত লিচুর স্থায়িত্ব থাকে মাত্র মাস খানেক।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে আলুর বাম্পার ফলন

নওদাপাড়ার সাজেদা নামের এক লিচুকন্যা জানান, বাড়তি আয়ের আশায় সংসারের কাজের ফাঁকে লিচু বাগানে সারাদিন পড়ে থাকলেও সন্ধ্যায় ৪ শ’ টাকা নিয়ে যখন বাড়ি ফেরেন তখন মনে হয় এ কাজ আর করবেন না, কিন্তু অভাবের তাড়নায় আবার ছুটে যান লিচু বাগানে। কলেজ ছাত্রী কেয়া বলেন, কলেজ থেকে বাড়ি এসেই তার মতো শত শত ছাত্রী ছুটে যান লিচু বাগানে। তবে বেশিরভাগ ছাত্রী সংসারের অভাব-অনটনের কথা ভেবেই লিচু বাগানে কাজে যান বলে স্বীকার করেন।

হেনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর এই এলাকার একাধিক লিচু চাষি কিংবা ব্যবসায়ীরা শূন্য থেকে লাখোপতি আবার কেউ কোটিপতি বনে যান, অথচ যাদের শ্রমে-ঘামে তাদের এই সাফল্য সেসব পরিশ্রমী নারীদের কথা ভাবেন না কেউ। প্রতি দিন নারীদের মজুরি ৩০০/৪০০ টাকা । দ্রব্যমূল্যর এই বাজারে ৩০০/৪০০ টাকায় কি হয়। সকাল ৮টা থেকে কাজের কথা বলা হলেও বেশির ভাগ দিনই সকাল ৬/৭ টার সময় থেকে কাজ শুরু করতে হয়।

লিচু আবাদি কৃষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিচুকন্যাদের মজুরি কম স্বীকার করে জানান, গ্রামের এসব নারী সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে বলে তাদের মজুরি কম।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন