বৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিম্নমানের মাড়াইকলে ভোগান্তি

নিম্নমানের মাড়াইকলে ভোগান্তি
  • ভিজা ধান নিয়ে বিপাকে ধানচাষিরা

শ্রীনগরে ভুর্তকির আওতায় নিম্নমানের ধান মাড়াই (পাওয়ার থ্রেশার) কলে কাটা ধান মাড়াইয়ে কৃষক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের প্রদানকৃত নতুন মাড়াই কলগুলো ধান মাড়াই শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পার্টসপত্র ভেঙে বিকল হয়ে পড়েছে। এতে করে ভিজা ধান নিয়ে বিপাকে পরেন কৃষক। প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের শ্যালো ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার থ্রেশার যন্ত্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে নিম্নমানের পার্টসপত্র ও অবকাঠামো দিয়ে।

কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। মাড়াই যন্ত্র নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান দি মেটাল (প্রা.) লিমিটেড যথাযথ সঠিক নিয়মে পার্টসপত্র ব্যবহার করেনি। কোম্পানি তাদের শর্তভঙ্গ করেছে। এতে ধান মাড়াই কলের নিম্নমানের হালাকা অবকোঠামো ভেঙে পড়ার পাশাপাশি ও পার্টসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি যন্ত্রগুলো দেখতে এসে সমস্যার সমাধান না করেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের লোকজন এলাকা থেকে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ভর্তুকির আওতায় তিনটি ধান মাড়াই যন্ত্র দেয়া হয়। প্রতিটি যন্ত্রের জন্য কৃষকের ৭৮ হাজার টাকা ও বাকি ৫২ হাজার টাকা সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। এ আওতায় উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, বাড়ৈখালী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম ও ষোলঘর ইউনিয়নের মারফত আলী ১টি করে ধান মাড়াই কল কেনেন।

কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১২ মে কৃষি অফিস ও মাড়াই কল প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাড়াই কল হস্তান্তর করেন। প্রথম দিন ধান মাড়াইকালে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই যন্ত্রের বডি থেকে নাট বল্টু খুলে আসে। ঠিকঠাক করে পুণরায় চালু করি কিছুক্ষণ পরে মাড়াই যন্ত্রটির ফ্যান ও অবকাঠামোর অন্যান্য অংশ ভেঙে যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।

আরও পড়ুনঃ  আলুর দামে স্বস্তিতে চাষি

শহিদুল ইসলাম আরো জানান, গত কয়েকদিন আগে সংশ্লিষ্ট মেটাল কারখানার লোকজন এসে ছবি তুলে সটকে পড়ে। মাড়াই কলটি এখন বিকল হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। এ সিজনে যন্ত্রটি চালানোর জন্য ১৫ হাজার টাকায় ১ জন শ্রমিক নিয়েছি। নিম্নমানের মাড়াই কলের কারণে কাটা ধান নিয়ে বিপাকে পড়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছি।

বাড়ৈখালী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, মেশিনটি আনার পরেই ভেঙে যায়। বাধ্য হয়েই স্থানীয়ভাবে ঠিক করি। এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ধান মাড়াই নিয়ে খুব ঝামেলার মধ্যে আছি।

ষোলঘর উমপাড়া এলাকার কৃষক মারফত আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মাড়াই কলের আমি ৮ কানি (প্রতি কানি ১৪০ শতাংশ) ধানের আবাদ করেছি। জমিতে ডুবা ধান কেটে বিকল মাড়াই কলের জন্য ভিজা ধান নষ্ট হচ্ছে। অন্যের মাড়াই কল এনে এ পর্যন্ত ৩শ মণের মত ধান মাড়াই করেছি। প্রতিমণ ধান মাড়াই করে ওই মাড়াই যন্ত্র বাবদ ২ কেজি করে ধান দিতে হচ্ছে। তার অভিযোগ মাড়াই যন্ত্রটি দেখতে কোম্পানির লোকজন পালিয়ে যায়।

ষোলঘর ইউনিয়ন উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি একাধিকবার কৃষকের বাড়িতে গিয়েছি। মাড়াই কলগুলোতে নিম্নমানের পার্টসপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। দি মেটাল (প্রা.) লিমিটেড তাদের শর্ত ভঙ্গ করে ২২ ঘোড়ার শ্যালো ইঞ্জিনের পরিবর্তে ২০ ঘোড়া ইঞ্জিন ও ৫২ কাটার পরিবর্তে ২৫ কাটা ব্যবহার করেছে। হালকা অবকাঠামো ও নিম্নমানের বিভিন্ন পার্টস ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ধান কেটে বাড়ী পৌছে দিলো চেয়ারম্যান সমর

সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাচ্ছি না। এর আগে বিকল মাড়াই কল দেখতে এসে তারা পালিয়ে যায়। শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রানী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন