শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদীভাঙনে দিশেহারা ভূমিহীনরা

নদীভাঙনে দিশেহারা ভুমিহীনরা

কারো ঠাঁই হয়েছে সড়কে, কারো বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে, কেউ আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে কেউ বা বিলের মধ্যে খুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। অসময়ে নদীর তীব্র ভাঙনে বাড়ি ঘর হারানো হাজারো পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাতিয়া উপজেলার ২নং চানন্দী ইউনিয়নের বাতানখালী বাজার থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিমি. নদীর তীরে পুরোটার চিত্র একই ধরনের।

সরেজমিনে দেখা যায়, চানন্দী ইউনিয়নের জনতাবাজারের বিশাল মসজিদটির বেশির ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। একই অবস্থা হেমায়েতপুর বাজার জামে মসজিদের। কয়েকজন মুসল্লিকে দেখা যায় ঘরবিহীন শুন্যভিটার উপর আছরের নামাজ আদায় করতে। নদীর একেবারে তীরে অবস্থিত মসজিদের ভিটির অনেকাংশে পাটাল ধরছে। ঝুঁকি নিয়ে তাতে নামাজ আদায় করছেন ইমামসহ ৫ মুসল্লি।

হেমায়েতপুর বাজার মসজিদের ইমাম ফারুক জানান, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বর্ষা মৌসুম আসার আগে মসজিদটি অন্যত্রে স্থানান্তরের। তবে শীত মৌসুমেও নদীর তীব্র ভাঙনে মসজিদটি দ্রুত স্থানান্তর করতে হলো। তবে নতুন জায়গার ব্যবস্থা এখনো হয়নি। এলাকার মুসল্লিদের অনেকে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিংস্ব হয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক সহযোগীতাও পাওয়া যাচ্ছেনা। আপাদত ঘরের চালসহ বিভিন্ন অংশ একজায়গায় রাখা হয়েছে। তাই নদীর তীরে শুন্যভিটার উপর নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। শুধু মসজিদ নয়। এ এলাকায় নদী ভাঙন এতটা তীব্র যে অনেকে ঘরবাড়ি স্থানান্তরের সময়টুকু পাচ্ছেনা। চানন্দী ইউনিয়নের কালাদুর বাজার থেকে পূর্ব দিকে গেলে হেমায়েতপুর বাজার। হেমায়েতপুর বাজারের একটু আগে সড়কের উপর চোখে পড়ে কয়েকটি বসত ঘরের অংশ বিশেষ স্তুপ করে রাখা। এরই পাশে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে দেখা যায় ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোচাচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ  মুগদা হাসপাতালের ১১ তলা থেকে লাফিয়ে করোনা রোগীর ‘আত্মহত্যা’

নলেচরের ফরিদপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল জানান, বিগতদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বর্ষায় নদীভাঙন তীব্র থাকে। শীতে এসে সে ভাঙনের গতি অনেক কমে যায়। তবে এবার তার ব্যতিক্রম হলো। শীত মৌসুমেও ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত তিন বছরের অব্যাহত ভাঙনে নলচেরচর ও কেরিংচরে প্রায় ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয় গুলোর অধিকাংশ ছিল দ্বিতলা বিশিষ্ট ভবন। সব শেষে গত মাসে ভেঙে যায় জনতাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি। সিডিএসপির  অর্থায়নে করা এসব ভবন এক একটি নির্মাণ করতে ব্যায় হয়েছে কোটি টাকার ও উপরে। তিনি আরো জানান, ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আছে নলেরচরের ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হেমায়েতপুর প্রাথমিক বিদ্যলয়সহ আরো ১০ থেকে ১৫টি স্থাপনা।

প্রশাসনিক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, গত তিন বছরের অব্যাহত ভাঙনে কেরিংচর প্রশাসনিক এরিয়ার প্রায় পুরোটাই ভেঙে গেছে নদীতে। এখন ভাঙছে নলেরচর। গত দুই মাসে নলেরচরেরও বিশাল এলাকা ভেঙে যায়। জনতাবাজারের পাশে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয় ভবন। নদীর একেবারে তীর চলে আসায় এখন আর সেখানে কার্যক্রম চালানো হয় না।

হাতিয়া উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, হাতিয়াতে আরো কিছু জায়গায় নদী ভাঙন আছে। তবে নলেচর ও কেরিংচরে ভাঙনের গতি অনেক বেশি। এখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস এর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রায় ৫কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে একটি ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। যার ব্যায় নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৩ শত ৮৫ কোটি টাকা। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় হয়ে এখন আছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আরো কিছু সমীক্ষা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির আলোকে আমরা এখন মাঠে কাজ করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে মহান মে দিবস উদযাপিত

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন