কৃষি নির্ভর দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষি থেকে কাঙ্ক্ষিত লাভবান হতে পারছে না কৃষকরা। ভারি বিনিয়োগের অভাবে ন্যায্য মুনাফা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণে ট্রাক্টরের বড় ধরনের ভূমিকা থাকলেও আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে তা কিনতে পারছেন না কৃষক। স্থবির হয়ে আছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কমবাইন্ড হারভেস্টারের মতো তুলনামূলক দামি কৃষি যন্ত্রপাতির বিক্রিও। যদিও কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এগিয়ে নিতে বিকল্প নেই এসবের।
২০১৭ সাল পর্যন্তও দেশে ট্রাক্টর বিক্রয়ে টানা প্রবৃদ্ধি ছিল। গত বছর থেকে এতে ছেদ পড়েছে। দুই বছর ধরেই কমছে ট্রাক্টর বিক্রি। চলতি বছরের ১০ মাসে ২০১৮ সালের ৭০ শতাংশ ট্রাক্টরও বিক্রি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষকের দুর্বল সক্ষমতায় এর প্রধান কারণ। তারা বলছেন, শুধু কৃষিকাজ করে যন্ত্রটি ক্রয়ের সামর্থ্য তৈরি হচ্ছে না কৃষকের। এ কারণে প্রয়োজন থাকলেও কৃষিযন্ত্রটি কিনতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল কবীর বলেন, ভারী যন্ত্র হিসেবে জমি তৈরি ও কৃষির বহুমুখীকরণে ট্রাক্টরের ভূমিকা অপরিহার্য। তা সত্ত্বেও সক্ষমতার অভাবে কৃষক যন্ত্রটি কিনতে পারছেন না। তাই সরকারের ভর্তুকি সহায়তা আরো বেশি সম্প্রসারণের পাশাপাশি যান্ত্রিকীকরণে অর্থায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।
এগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর রয়েছে ৫০ হাজারের মতো। এর বাইরে আরো ২০ হাজার ট্রাক্টর রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে ট্রাক্টর রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার।
২০১৭ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২০-৩০ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হয়েছে দেশে ট্রাক্টরের বাজার। ২০১৪ সালে মোট ৪ হাজার ৯০টি ট্রাক্টর বিক্রি হলেও ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৯২টিতে। ২০১৬ সালে বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৬৫টিতে। দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক ট্রাক্টর বিক্রি হয় ২০১৭ সালে ৯ হাজার ২৫০টি। এরপর থেকেই কমতে থাকে ট্রাক্টরের বাজার।
ট্রাক্টর কেনার সামর্থ্য না থাকায় বিকল্প হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পাওয়ার টিলার বেশি কিনছেন কৃষকরা। ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়ার টিলার কিনতে পারছেন কৃষক। বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশের বেশি জমি চাষ হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। যদিও পাওয়ার টিলারের কারণে মাটির নিচে শক্ত স্তর তৈরি হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য, সুস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও হুমকি বয়ে আনছে। এতে শস্যের উৎপাদনশীলতা কমার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
আনন্দবাজার/ইউএসএস