রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু সেতুতে শ্রমিক অসন্তোষ

বঙ্গবন্ধু সেতুতে শ্রমিক অসন্তোষ

দাবি আদায়েন বহিষ্কার অনেকেই

বঙ্গবন্ধু সেতুতে কর্মরত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকুরি স্থায়ী করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করায় বহিস্কার ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে অনাহারসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী লিমিটড বাংলাদেশ (সিসিসিসি) বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে উল্টো শ্রমিকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় মেয়াদে গত বছরের ২৯ জুন বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী লিমিটড বাংলাদেশ (সিসিসিসি)। নিয়ম অনুযায়ী সেতুতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনরায় নিয়োগপত্র প্রদান করবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সিসিসিসির কাছ থেকে কোনো নিয়োগপত্র পায়নি শ্রমিকরা। এছাড়া গেল তিন মাসের কোনো বেতন দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধ, স্থায়ী নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অপারেশন ডিরেক্টর হু ডেপিং এর কাছে যান। এ সময় অফিসের সামনে শ্রমিকদের বাঁধাদেয় কোম্পানীর সিকিউরিটি ম্যানেজার অব. মেজর মাহফিজুর রহমান। এঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এক পর্যায়ের দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

এদিকে সেতুতে কর্মরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সেতু কর্মরত বিদেশীদের নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজনসহ বেশ কিছু শ্রমিককে চাকুরি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ফলে চাকুরি হারিয়ে এবং বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কুমিল্লায় সংবাদকর্মী হত্যার ঘটনায় ৪ গ্রেপ্তার

অন্যদিকে আন্দোলন ইস্যুতে একদিকে শ্রমিকদের ছাঁটাই করায় নতুন শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে সেতুতে স্থানীয় লোকজন কর্মক্ষেত্র থেকে বি ত হচ্ছে।

সেতুতে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, একমাসের বেতন পরের মাসে শেষের দিকে দেয়া হয়। উৎসব ভাতা, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষাক-পরিচ্ছদসহ নিয়োগপত্রে বেতন উল্লেখ করার দাবী করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানী সরকারের কাছ থেকে শ্রমিকদের বেতন বেশি দেখিয়ে আমাদের কম দেয়া হচ্ছে। এতে কাঙ্খিত পরিশ্রম করলেও কোম্পানী আমাদের ঠকাচ্ছে। বারবার দাবীগুলো কর্তৃপক্ষ জানানো হলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি।

দেড় যুগ ধরে চাকরি করা এক কর্মকর্তা চাকরি হারানোর ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিসিসিসি কোম্পানী দ্বিতীয়বারের মত বঙ্গবন্ধু সেতুর দায়িত্ব পেয়েছে। সেই অনুযায়ী কয়েকমাস পার হলেও শ্রমিকদের কোন নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। পূর্বে আমাদের প্রদানকৃত নিয়োগপত্রে কোন বেতনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। নির্ধারিত ডিউটির চেয়ে বেশি ডিউটি করলে কোন অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। কয়েকমাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবীর বিষয়ে কোম্পানীর প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাঁধা দেয় হয়। যৌক্তিক দাবী তুলে ধরায় বেশ কয়েকজনকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী লিমিটড বাংলাদেশ (সিসিসিসি) অপারেশন ডিরেক্টর হু ডিপেং এর সাথে মোবাইলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনঃ  'সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে কোন অবস্থাতে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া যাবে না'

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লিটন জানান, সিসিসিসির প্রধান বেশ কয়েকজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হোসাইন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি কোম্পানীর সাথে শ্রমিকদের ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি কোম্পানীর নিজস্ব। তারাই এই বিষয়ে জানাতে পারবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন