সাতদিনের মধ্যে ছাড়তে হবে বাঁধ চোখে অন্ধকার দেখছে অর্ধশত পরিবার পুনর্বাসনের নির্দেশনা নেই
একসময় স্বামী মোক্তারের অনেক জমিজমা ছিল। সর্বনাশা ধরলা নদী তা গিলে খেয়েছে। হারিয়েছেন ভিটেমাটি। অতীতের দিনগুলির কথা মনে পড়তেই দুই চোখে অশ্রু চলে আসে। ছলছল চোখে বৃদ্ধা কাছুয়ানী বেওয়া কথাগুলো বলছিলেন এ প্রতিবেদককে।
বয়স ৭০ ছুই ছুই করা কাছুয়ানী একজন ভিক্ষুক। বয়সের ভারে এখন আর চলাফেরা করতে পারেন না। তার স্বামী মারা যায় ১৫ বছর আগে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে কাশেম (২৫), ছেলের স্ত্রী আছমা ও দু’বছরের নাতিকে নিয়ে তাদের সংসার। পানি উন্নয়ন বাঁধে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দোছালা একটি টিনের ঘরে থাকেন তারা। রাতে গাদাগাদি করে ঘুমান। চোখে না দেখে বুঝার উপায় নেই ঘরের ভিতরে কেমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তারপরও এতেই সন্তুষ্ট ছিলো বৃদ্ধা কাছুয়ানীর পরিবার। তবে এরই মধ্যে মাথায় বজ্রপাতের মতো খবর পেয়েছেন কাছুয়ানী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে আগামী সাতদিনের মধ্যে বাঁধের সকল অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে। তা না হলে বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য তাদের থাকার ঘরটিসহ বাঁধের সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে। কাছুয়ানী বেওয়ার আর কোনো ভূমি নেই, যেখানে ছাউনি তুলে মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলবে।
এ চিত্র শুধু কাছুয়ানীর একার নয়, বাঁধে বসবাসকারী ছবরুল, ছলিল, মোমেনা, মালেক, খালেক. মনির, রহিম সাধু, আক্কাস, আমিনুল, শহিদুলসহ প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের। রাক্ষুসে ধরলা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে গত পাঁচ বছর ধরে বাঁধেই ঘর তুলে বসবাস করছেন। তাদের এখন দুর্বিষহ জীবন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার নিদের্শনা দেওয়ার পর থেকে কাছুয়ানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন।
ভিক্ষুক কাছুয়ানী জানান, আমরা এলা কনঠে যায় বাহে! নেই কোন জমিজমা। বাধেঁই আমার ঠিকানা। এটাও যদি ভেঙে দেয় বা সরিয়ে ফেলতে হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো। আমার কি কোন ব্যবস্থা হবে না বাহে!
স্থানীয় আশরাফুল নামের একজন শিক্ষক বলেন, যারা ওয়াপদা বাঁধে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছেন তারা অধিকাংশ পরিবার ধরলার ভাঙনের শিকার। এ মুহূর্তে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো তাদের কোনো জায়গা নেই। তাছাড়াও ওখানকার সবাই গরীব-অসহায় ও দিনমজুর। প্রতিটি পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। সবার চেয়ে কাছুয়ানীর অবস্থা করুণ। তাদের জায়গা-জমি নেই। একেবারে অসহায়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, যারা পানি উন্নয়ন বাঁধে ঘরবাড়ি ও বাজারসহ অবৈধ স্থাপনা তৈরী করে আছেন তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দ্রsততম সময়ে আমরা সেখানে নতুন করে বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য কাজ শুরু করবো।
যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই সেই অসহায় পরিবারগুলো কোথায় যাবে, কীভাবে তাদের বাসস্থান হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এবিষয়ে এখনো কোনো নিদের্শনা পাওয়া যায়নি।
আনন্দবাজার/এম.আর