- মিনারের উচ্চতায় বিশ্বের দ্বিতীয়
- নির্মাণ ব্যয় শত কোটি টাকা
পৃথিবীর সকল রেকর্ড পেরিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ স্থাপিত হলো বাংলাদেশে। ২০১টি গম্বুজ ও ৯টি সু-উচ্চ মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে এ মসজিদের নকশা করা হয়েছে। মসজিদটির পুরো নির্মাণ কাজ অনেকটাই শেষের দিকে। এই মসজিদটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল প্রকৃতির নৈস্বর্গিক পল্লী দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে মসজিদটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলার হাজারো উৎসুক দর্শনার্থী ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরে।
২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট। মসজিদ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক শত কোটি টাকা। চলতি বছর মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা ছিলো। তবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি গম্বুজ রয়েছে। বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে ২০০টি। এদের প্রত্যেকের উচ্চতা ১৭ ফুট। মূল মসজিদের চার কোণায় রয়েছে চারটি মিনার। এদের প্রত্যেকটির উচ্চতা ১০১ ফুট। পাশাপাশি আরও চারটি মিনার রয়েছে ৮১ ফুট উচ্চতার। ৪৫১ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৫৭ তলা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মিনার স্থাপন করা হবে।
১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল এ মসজিদে এক সাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের ভিতরে চার দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত রয়েছে পূর্ণপবিত্র কুরআন শরিফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে, দিনে বা রাতে যে কোন সময় মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত কুরআন শরিফ পড়তে পারবেন। মসজিদের প্রধান ফটক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫০ মণ পিতল। আজান প্রচারের জন্য মসজিদে সবচেয়ে উঁচু মিনার নির্মাণ করা হবে। মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে সহ¯্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত থাকবে। মসজিদ পাদদেশে ২২ বিঘা জমির ওপর একটি সুদর্শন হেলিপোর্ট স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হেলিপোর্টটি উদ্বোধন করেছে ধর্মমন্ত্রী।
১৫ বিঘা জমির ওপর বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। মেহরাবের পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। এ ছাড়াও মসজিদের পাশে নির্মাণ করা হবে সু-বিস্তৃত আলাদা ভবন। ওই ভবনে থাকবে মাদ্রাসা কমপ্লক্সে, এতিমখানা, দু:স্থ নারীদের চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকছে বেকার যুবকদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রকল্প।
কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত মেছের আলীর ছেলে। তারা ৬ ভাই-তিন বোন। রফিকুল ইসলাম সবার বড়। রফিকুল ইসলাম জনতা ব্যাংকের সিভিএ প্রেসিডেন্ট। তার আরও তিন ভাই জনতা ব্যাংকে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন এবং আরেক ভাই ঢাকায় ব্যববসা করেন। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তি উদ্যোগে মসজিদটির কাজ শুরু করেছি। আমার পরিবারের লোকজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিরা আমাকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমার স্বপ্ন ছিল ব্যতিক্রম কিছু করার। সেই চিন্তা থেকেই এটির উদ্যোগ নেই। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে বিশ্বের সব চেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করতে পেরেছি।
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই আব্দুল করিম বলেন, মসজিদটি বিশ্বের সব চেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদটির উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী উদ্বোধনের দিনধার্য্য করা হবে। ওই দিন পবিত্র কা‘বা শরীফের প্রধান ঈমাম সাহেবও উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই মসজিদটি করার জন্য উদ্যোগ নেন। আমরা তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তার বন্ধুরাও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও মুসুল্লিরা দানবাক্সে দান করে যাচ্ছেন। দুই ঈদে প্রায় ৩০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন মুসুল্লিরা। এ ছাড়াও মসজিদটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারেরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। মসজিদটির নির্মাণ সামগ্রি দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে। এ সব নির্মাণ সামগ্রি আনতে সরকারকে কোনও প্রকার রাজস্ব দিতে হচ্ছে না।
আনন্দবাজার/এম.আর