শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাহারি স্টলে আকর্ষণীয় পণ্যের সমাহার

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার-প্রসার, বিক্রি ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নবম বারের মতো শুরু হয়েছে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২১’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার-প্রসার, বিক্রি ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নবম বারের মতো শুরু হয়েছে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২১’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ১৯ মাস বিরতির পর এসএমই ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করেছে। ২০২০ সালের মার্চে এসএমই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, যখন দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিত হয়। মেলার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা। মেলায় বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের বাহারি পণ্য নিয়ে ৩২৫টি স্টল সাজানো হয়েছে। প্রথম দিন অধিকাংশ স্টলে শেষ সময়ের প্রস্তুতির মাধ্যমে সাজানোর কাজ চলছিল।

জহিরুল ইসলাম তার স্টল সাজাচ্ছিলেন আর বলছিলেন তার স্টল ‘অগ্রজ’-এর কথা। বেত, পাট, হোগলা পাতা আর বাশের তৈরি তৈজসপত্র দেশের বাজারের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে আমেরিকা, নিদারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মাত্র ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে কাজ করলেও তাদের পণ্য মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ২০২০ সালে কুটির শিল্প পুরস্কারও পেয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব কোনো বিক্রয় কেন্দ্র না থাকলেও বিক্রি করছেন বিজিবির শো-রুম এবং বিমান বাহিনীর শো-রুম রংধনুতে।

মেলার পাট পণ্যের অংশে দেখা গেল পাট থেকে জুতা তৈরির এক ভিন্ন স্টলের। এমএস জুট সু নামের এ প্রতিষ্ঠান সাদা পাটের আশ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের জুতা তৈরি করে থাকে। তাদের পণ্য অবশ্য শতভাগ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ফ্রান্স, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতি মাসে তাদের ২ থেকে ৪ কন্টিনার জুতা রফতানি হয়। মাসে এক থেকে দেড় কোটি টাকার জুতা বিক্রি হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে জুতা ও পাটের ব্যাগ রফতানি করছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আকতার জানালেন দিনকে দিন তাদের প্রধান কাচাঁমাল সাদা পাটের সংকট দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  হিলি স্থলবন্দরে কমেছে পেঁয়াজের মূল্য

ভোল মৃৎশিল্পের বিক্রয় কর্মী সোহেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের বিদেশে রফতানির গল্প। বিশ্বের দশটি দেশে তাদের বিভিন্ন মাটির তৈরি টব, পট, শো-পিস, মোমদানি, মাটির ব্যাংক রফতানি করা হয়। তাদের বাংলা ও ইংরেজিতে নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। দেশের সকল জেলায় রয়েছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা।

এসবের পাশাপাশি হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল দেখা গেছে মেলায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই প্রতিনিয়ত হালকা যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে। এসব চাহিদার কথা বিবেচনা করে চীন থেকে বিভিন্ন যন্ত্র আমদানি করছে এইচআরজি মটরস। ফুড ও গার্মন্টস শিল্পের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ছাড়াও খননের জন্য এক্সকেভেটর, রোলার, ডাম্প ট্রাক, পাম্পসহ বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে আসছে। ১৪ জন নিয়মিত কর্মী থাকলেও প্রতিনিয়ত তাদের বিক্রি ও অর্ডার বাড়ছে।

হ্যান্ডিক্রাফট কাপড়ের পণ্য নিয়ে নীলফামারী থেকে এসেছেন আজিজুল হাকিম সৌরভ। হস্ততাঁত দিয়ে নকশা করে হাতেই তৈরি হচ্ছে হ্যান্ড লোমের কাপড়। শতভাগ তুলার সুতা দিয়ে এসব পোশাককে ইকো ফ্রেন্ডলি বা পরিবেশবান্ধব বলছেন সৌরভ। শাড়ি, ওড়না, কামিজসহ মেয়েদের পোশাকই বেশি এখানে। মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হলেও দিনে দিনে বাজার কমে আসছে। কারণ হিসেবে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকা এবং নতুন উদ্যোক্তারা বাজার বিশ্লেষণ না করেই কম দামে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক লোন দেয়ার কথা থাকলেও কঠিন শর্তের কারণে নিরাশ হয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের। ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে লাভের একটি বড় অংশ চলে যায় এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পকেটে। তাছাড়া বিদেশি বিভিন্ন মেলায় পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানান এ উদ্যোক্তা।

আরও পড়ুনঃ  বাজারের হিসাবে গড়মিল

এবার অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬০ ভাগ নারী এবং ৪০ ভাগ পুরুষ। মেলায় অংশ নিয়েছে ফ্যাশন ডিজাইন খাতের সবচেয়ে বেশি ১১৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৭টি, খাদ্য/কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য খাতের ৩৬টি, হ্যান্ডিক্রাফটস আইটেম ৩৩টি, পাটজাত পণ্য খাতের ২৯টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য খাতের প্রতিষ্ঠান ১৭টি, আইটি খাতের ৪টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৬টি, হারবাল/অর্গানিক পণ্যের ৪টি, জুয়েলারি পণ্যের ৪টি এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান এবার অংশ নিয়েছে এবারের মেলায়।

উল্লেখ্য, গত ৮টি জাতীয় এসএমই মেলায় ১ হাজার ৫৬১ জন উদ্যোক্তা প্রায় ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি, ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার অর্ডার গ্রহণ এবং ৮৬টি আঞ্চলিক (বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে) এসএমই পণ্য মেলায় ৩ হাজার ১৬২ জন এসএমই উদ্যোক্তা পণ্য প্রদর্শন করে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় এবং ২১ কোটি ১৪ লাখ টাকার অর্ডার গ্রহণ করেছিলেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন