শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকিতে আলো ছাড়ানো ভবন

ঝুঁকিতে আলো ছাড়ানো ভবন

প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই যুগ ফেরিয়ে গেলেও আধাপাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ডিগ্রি কলেজে পাঠদান কার্যক্রম। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়ানো কলেজটিতে পাঠদানের জন্য সরকারিভাবে পাকাভবন নির্মিত না হওয়ায় হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কলেজটিতে নতুন ভবন নির্মান করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৫ বছরের পুরনো ভবন দুটি। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। খুলে গেছে চালের টিনের পাত। বারান্দাও ধসে পড়ছে। বিভিন্ন স্থানে শেওলা ও আগাছা জন্মেছে। টয়লেটের পরিস্থিতিও নাজুক। বর্তমানে এ ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। প্রায় ৪‘শ শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের পাঠদান ও পরীক্ষা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, উপজেলায় শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ভবন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার আবেদন করেও কাজ হয়নি। এ জন্য তারা স্থানীয় সাবেক সাংসদের একপেশে নীতিকে দায়ী করছেন। তবে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদরের বাইরে স্থাপিত বলদিয়া কলেজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। কলেজটি প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর এমপিওভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ের পাঠদান শুরু হয়।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ ও দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ে। ভবন স্বল্পতার কারণে নেই কমনরুম, লাইব্রেরি, মেয়েদের স্বতন্ত্র টয়লেট।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু, তমা ও নুর ইসলাম জানান, কলেজে পাঠদান কক্ষের স্বল্পতা ও বিশ্রামাগার সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও পৃথক শৌচাগার না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন্য কলেজগুলোর মতো একটি পাকা ভবন হলে এ সমস্যাগুলো দূর হবে। ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মাইদুল ইসলাম মুকুল এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য কোন কমন রুম নেই। লাইব্রেরি রুম ও নির্দিষ্ট কোন বিজ্ঞানাগার নেই। মেয়েদের জন্য নেই আলাদা টয়লেট, সাইকেলের গেরেজ। শ্রেণিকক্ষ সংকটে রুম শেয়ার করে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুনঃ  জবিশিসের সভাপতি ড. আইনুল ও সম্পাদক কালাম

কলেজের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থে নির্মিত আধাপাকা একটি টিনসেড ভবনেই শিক্ষার্থীদের দুইযুগ ধরে পাঠদান করা হচ্ছে। পাঠদানের জন্য ভবন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তুু অদৃশ্য কারণে সাড়া মিলেনি। তিনি আরো বলেন, এতো বছরেও ভবন বরাদ্দ না হওয়ায়, কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকের একপেশে নীতিকে দায়ী করেন অভিভাবকসহ অনেকেই। তবে বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য দ্রæতই ভবন সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাবেক জাপা সাংসদ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা এলাকাবাসির অভিযোগ ভিত্তিহীন ও কল্পনা প্রসূত। আমার সময়ে ডিগ্রী কলেজ ছাড়া চারতলা ভবন বরাদ্দের কোন অপশন ছিল না। যেহেতু ওই সময়ে বলদিয়া কলেজটি ছিল স্কুল এন্ড কলেজ, তাই নিয়ম অনুযায়ী ভবন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

এদিকে কুড়িগ্রাম-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর বলেন, বলদিয়া ডিগ্রি কলেজের ভবন সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ৪তলা একটি ভবনের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শুধু বলদিয়া কলেজ নয় পর্যায়ক্রমে আমার নির্বাচনী এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন করার প্রচেষ্টা আমার আছে এবং থাকবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন