ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকিং খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পাহাড়

স্ট্রেসড অ্যাসেট বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পাহাড়ে চাপা পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকায়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পর্যালোচনা বৈঠকে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বৈঠকে পিডাব্লিউসি বাংলাদেশ ‘প্রেজেন্টেশন অন দ্য রিসলিউশন অব স্ট্রেসড অ্যাসেটস ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক কি পেপার উপস্থাপন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ৩০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে।

প্রেজেন্টেশনে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসায় ভারতের সাফল্যের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে দেউলিয়া আইন কার্যকর করেছে দেশটি। আইন প্রয়োগে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে টাকা আদায় করেছে তারা। ঋণ আদায়ে আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করেছিল ভারত,যে সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল পূর্ণ স্বাধীনতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে ফর্মুলায় ভারতে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী করা যায় সেটা পরবর্তী সময় ঠিক করা হবে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য প্রতিনিয়ত ঋণ অবলোপন এবং পুনঃ তফসিলের দিকে এগোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ব্যাংকগুলো নিজেদের অবস্থা ভালো প্রমাণ করতে অনেক তথ্য গোপন করছে। খেলাপি হওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পরও অনেক ঋণকে খেলাপি দেখানো হচ্ছে না। বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই ঋণখেলাপি হলেও তা গোপন রাখা হচ্ছে। এতে করে আনুষ্ঠানিক হিসাবে খেলাপি ঋণ কমলেও আদতে তা কমছে না।

বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হিসাবে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

যদিও আইএমএফের হিসাব মতে ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ অবলোপন হয়েছে ৪০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। গত সাড়ে ছয় বছরের এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ঋণ পুনর্গঠনের ১৫ হাজার কোটি টাকা সহ দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। তবে ইতোমধ্যে এর কিছু অংশ আদায় করা হয়েছে।

পুনঃ তফসিল করতে নির্ধারিত হারে নগদ ডাউন পেমেন্ট করতে হয়। খেলাপি হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য এবং খেলাপি হওয়ার পর তা নিয়মিত করতে ডাউন পেমেন্ট করে পুনঃ তফসিল করেন ঋণগ্রহীতারা।  ঋণ পুনঃ তফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয় ২০১২ সালে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ২০১৩ সালে শিথিল শর্তে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ করে দেওয়া হয়। যে কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃ তফসিলের গতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ছয় বছরে ব্যাংকিং খাতে এক লাখ ২৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।

২০১৮ সালে ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছিল। এর আগে ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালে বিশেষ বিবেচনায় পুনর্গঠন করা হয়েছিল ১১টি শিল্প গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

 

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন