শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেমিটেন্সে ফিরছে সুদিন

  • তেলের দাম বাড়িয়ে পুনরুদ্ধারে ফিরছে মধ্যপ্রাচ্য
  • তেলসমৃদ্ধ দেশে বাংলাদেশি শ্রমশক্তির চাহিদা বেড়েছে
  • মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বাড়ছেই
  • প্রবাসী আয় প্রবাহও বাড়ছে দিন দিন

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে চাঙ্গা থাকলেও গেল কয়েক মাস ধরেই প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে খানিকটা ভাটা পড়েছে। এতে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করলেও ঠিক এই সময়ের মধ্যে দেশে বেড়ে গেছে শ্রমশক্তি রফতানি। যার প্রভাব পড়বে আগামীতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিটেন্সের সুদিন ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে আগের মতোই দেশে প্রবাসী আয় প্রবাহ বেড়ে যাবে।

সূত্রমতে, করোনা মহামারির সময়েও বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশিরা। প্রতিমাসে গড়ে ৬০ হাজার চাকরির সংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ সুযোগ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। তবে গেল বছরে হঠাৎ করেই চাকরির সুযোগ হতাশাজনক পরিস্থিতিতে নেমে আসে। এমনকি গেল বছরের এপ্রিল-জুনে কোনো অভিবাসন হয়নি। এ ঘটনার প্রভাব পড়তে শুরু করে পরবর্তীতে। কয়েক মাস পর হঠাৎ করেই রেমিটেন্সের তেজি ঘোড়া দৌড় থামিয়ে দেয়। কমতে থাকে প্রবাহ।

তবে বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য বা উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো দ্রুত পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। সে কারণে সেখানে বেড়ে গেছে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রফতানির হার। চলতি বছরের অক্টোবরে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি পাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আগের মাস সেপ্টেম্বরের চেয়ে এ হার ৫৫ শতাংশ বেশি।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, অক্টোবরে বিদেশে চাকরিপ্রাপ্তদের সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে ৫৫ ভাগ বেড়ে গেছে। গেল বছরের আগস্টে করোনামহামারির কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর সচল হয়ে ওঠে মাধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার। পরের মাসগুলোতেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। চলতি বছরের অক্টোবরে বছরওয়ারি হিসাবে শ্রমিক অভিবাসন ৭৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  অক্সিজেন সংকটে সাতক্ষীরায় ৯ জনের মৃত্যু

সূত্রমতে, মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদিতে গেল অক্টোবরে চাকরি পেয়েছেন ৫১ হাজার ৪৭২ জন বাংলাদেশি। অথচ গেল জুনে সৌদিতে চাকরি পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৯৮৫ জন। তবে পরের মাস জুলাইয়ে আবার মাত্র ১১ হাজার ২৮২ সৌদিতে নিয়োগ পান। আবার পরের মাস আগস্টে কিছুটা বেড়ে ১৪ হাজার ৯১৯ জনের নিয়োগ হয়। আবার সেপ্টেম্বরে দ্বিগুণেরও বেশি ৩১ হাজার ২৩৮ জন পান। তথ্যমতে, চলতি নভেম্বরে সৌদি আরব যাচ্ছেন আরো ৪০-৫০ হাজার বাংলাদেশি। যাদের মধ্যে থাকছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নির্মাণ শ্রমিক।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশিরভাগ কর্মসংস্থান হচ্ছে জিসিসিভুক্ত সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডান এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে। তবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের শীর্ষ গন্তব্য সৌদি আরব। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গেল অক্টোবর মাস পর্যন্ত সৌদিতে চাকরি পেয়েছেন প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি। যা এই সময়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৭৮ শতাংশ। কুয়েত, লেবানন, মরিশাস, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যেও অল্প সংখ্যক বাংলাদেশির নিয়োগ ঘটছে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। সীমিত হলেও বাংলাদেশিদের জন্য সেখানেও খুলে গেছে শ্রমবাজার।

সব রেকর্ড ছাপিয়ে করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে নজিরবিহীন রেমিট্যান্স প্রবাহ আসে। গেল বছরের জুলাইয়ে প্রবাসী আয় গিয়ে ঠেকে ২৬০ কোটি ডলারে। যা একক মাসের জন্য রেকর্ড। করোনা মহামারির শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল প্রবাসী আয়ে ধস নামবে। তবে সব আশঙ্কা দূর করে ২০২০ সালে এক লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে বাংলাদেশে। তাতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মিথ্যা তথ্য দেয়ায় ১৪৬ পোশাক কারখানা বাদ পড়ছে

প্রবাসী আয়ে ২০১৯ সালে যেখানে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে অষ্টম স্থানে, পরের বছর ২০২০ সালেই উঠে আসে সপ্তম স্থানে। তবে রেমিট্যান্সের সেই প্রবাহ বর্তমানে কিছুটা পড়তির দিকে এখন। গেল ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ৭ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন