ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালুকায় বাড়ছে গাছের ডাল ভেঙে প্রাণহানি

ভালুকা উপজেলা কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন ফেরদৌস আহাম্মেদ। ২০১৩ সালের ২৭ জুন নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে গাছের ডাল ভেঙ্গে মাথায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ওই কর্মকর্তার। ওই দিন সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় ব্যাংকে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ড চত্তরের রাস্তার পাশের মরা একটি শিমুল গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে ছিল তাঁর মাথায়। আশপাশের লোকজন আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এক কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ফেরদৌস আহাম্মেদের মৃত্যু হয়।

উপজেলার মল্লিকবাড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক বনভোজন শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার পর বাজারের গরু হাঠের স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে থাকা মরা একটি আম গাছ রাত ৯ টার দিকে হঠাৎ করে ভেঙ্গে পড়ে দর্শকদের উপর। এতে বেশ কয়েক জন আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন নামের একরোগীকে মৃত ঘোষনা করেন এবং মোঃ শহিদ নামের আরেক জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শহিদের মৃত্যু হয়।

নাসির ও শহিদের বাড়িতে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় একেবারে নিরবতা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে অভাবের সংসারে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পরিবার দুটি। বাড়ি ভর্তি মানুষ থাকলেও তাদের মধ্যে নেই তেমন কথাবার্তা।সবার মধ্যেই দুশ্চিন্তার ছাপ। নাসির এবং শহিদ কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। দিন এনে দিন খাওয়া লোক।শহিদের মৃত্যুর দিনেও ঘরে রান্না করার মতো চাল ছিল না। পরের দিন আশপাশের প্রতিবেশীরা বাড়িবাড়ি টাকা উঠিয়ে ৫০ কেজি চাল, দুই কেজি সয়াবিন তেল,তিন কেজি ডাল কিনে দিয়েছেন। নাসিরের এক মাত্র মেয়ে খাদিজা স্থানীয় এডুকো বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। করোনার কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন স্থানীয় কিন্ডার গার্ডেনের বই কেনার টাকার অভাবে খাদিজার পড়া লেখাও বন্ধের পথে।

খাদিজার মা নুরজাহান বেগম বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাঁর স্বামী।কাঠ মিস্ত্রির রোজের টাকায় চলতো সংসার।এখন নয় মাসের অন্তঃসত্তা নুরজাহান। হাতে নেই কোনো টাকা। গর্বের সন্তান নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় তিনি। বাবা-মা ,ভাই বোন না থাকায় নেই সাহায্যের আশাটুকুও।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, নুরজাহানের জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানায় জটিলতা রয়েছে। সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না।
শহিদের স্ত্রী শাহনাজ বলেন,তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে শহিদ নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় পড়েন। ছোট মেয়ের বয়স ১৫ মাস। এক মাত্র ছেলে স্থানীয় হাফেজি মাদরাসায় পড়ে। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর দিনে রান্নার চাল ছিল না ঘরে।

চাল কেনার জন্যই বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় শহিদের।পরের দিন প্রতিবেশীরা বাড়িবাড়ি টাকা উঠিয়ে চাল,ডাল তেল কিনে পৌঁছে দেন। ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি চাল শাহনাজের হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল হক।

এর আগে উপজেলার কয়েকটি বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মল্লিকবাড়ি বাজরের ভিম বাবুর মুদির দোকানের উপর দুটি আম গাছ,গরুর বাজারে তিনটি রেইনট্রি,দুটি আম,ইদ্রিস মোড়লের হোটেলের উপর একটি আম গাছ,কাঁচা বাজারে বারেক ডিলারের ঘরের উপর একটি রেইনট্রি, মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের ভূমি কার্যালয়ে কাঠাল ও শেগুন, কাচিনা ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া বাজারের গরুর হাঠে পাঁচটি কাঠাল,উথুরা ইউনিয়নের মাছ বাজারের সেটের উপর একটি বিশাল রেইনট্রি গাছ মরা অবস্থায় খারা দাঁড়িয়ে রয়েছে।স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,দ্রুত এসব মরা গাছ না সরালে মল্লিকবাড়ি বাজারের দূর্ঘটনার ন্যায় বাড়তে পারে প্রাণ হানির সংখ্যা ।

উথুরা বাজরের ইজারাদার রবিউল আলম জানান,মাছ বাজারের সেটের উপর মরা রেইনট্রি গাছটির মাধ্যমে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গাছটি সরিয়ে নেওযার জন্য প্রশাসনকে মৌখিক ভাবে জানিয়েন তিনি ।

মরা গাছের বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন,উপজেলার হাট-বাজারের মরা গাছের তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই গাছ গুলো সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন