ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রূপগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলন

রূপগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলন

এবছর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। ভাল ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন জাতে বারি ও বীনা সরিষার আবাদ হয়েছে রূপগঞ্জে। সাথী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে রূপগঞ্জের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

উপজেলার হাটাব, কেড়ার, মিঠাব, কান্দাপাড়া, মাসাব, তেতলাব, পশ্চিম গাও, মাঝিপাড়া, পাচাইখা, বলাইখাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হলুদে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ১৬৫ একর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন কুয়াশায় ঢাকা শীতের চাদরে দিগন্ত জোড়া সরিষার হলুদ মাঠ। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট মৌমাছিরাও, ব্যস্ত মধু আহরণে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কাশেম মিয়া জানান, তিনি ৫৬ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে প্রচুর। হাটাব এলাকার চাষি কামাল হোসেন জানান, এ বছর ৯০ শতাংশ জমিতে তিনি সরিষা চাষ করেছেন। এবার ৩৬০ থেকে ৩৭০ কেজি সরিষা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্য ফসলের সাথী ফসল হিসেবে এখন বেড়েছে সরিষার চাষ। কার্তিকে চাষ করার পর অগ্রহায়ণ মাস শেষ হতে না হতেই সরিষা ফুল ফোটার ধুম পড়েছে। মাঠের দিকে তাকালে মনে হয়, সবুজ-হলুদের সমন্বয়ে বাতাসে দোল খাওয়ার মতো কৃষকদের মনও দোলছে। হলুদ চাদরে সোনালী আভায় গোটা প্রান্তর হয়ে উঠেছে আলোকময়। যেন এক হলুদের দিগন্ত।

উপজেলার পাছাইখা এলাকার সরিষা চাষি ছলিমুল্লাহ মিয়া জানান, ‘গত বছরের মতো এবারও মৌসুমী ফসল সরিষার আবাদ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার আরো বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারবো।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন ভালো ফলনের জন্য করণীয় বিষয়ে বলেন, সরিষার চাষে বোরন ব্যবহার করলে দানা পুষ্ট হবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে। জাত ভেদে সরিষা আবাদের মাত্র ৮০-১০০ দিনেই ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি কেজি সরিষা থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম তেল পাওয়া যেতে পারে। সরিষা চাষের জমিতে বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়ছুন নাহার হাওলাদার বলেন, এ উপজেলার মাটি সরিষা আবাদের জন্য অনেক উপযোগী। উপজেলায় গত বছরের তুলনায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বারি সরিষা- ৯, ১১, ১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮ জাতের ৩০টি প্রদর্শনী ও ৫০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বীনা ৪ ও ৯ জাতের সরিষাও আবাদ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি ও বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেই। সর্বোপরি এ বছর করোনা ও বন্যায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিধায় সরকারের নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে দুই হাজার কৃষককে সরিষা চাষে কৃষি প্রণোদনা বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতায় তাদের পাশে আছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। তিনি আরো জানান, এ দিকে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য এক হাজার ২০০ মৌবক্স নিয়ে প্রস্তুত আছে মৌচাষীরাও।

কৃষক আব্দুল হালিম মিয়া জানান, বারি সরিষা-১৪ চাষ করতে প্রতি একরে চাষ, বীজ, সার-ওষুধ ও সেচে কৃষকের সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ১০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন হয় ৬০০ কেজি, যার বাজারমূল্য ৪৮-৫০ হাজার টাকা। কম খরচে বাড়তি আয়ের জন্য কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে এবং এ বছর তারা সরিষা চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছে।

আনন্দবাজার/শাহী/ফয়সাল

সংবাদটি শেয়ার করুন