ঘাস চাষ শিখতেই ব্যয় হবে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা! ঘাসের চাষাবাদ শিখতে সরকারি ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যয় হিসেবে এই খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটিতে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। অর্থ অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এটি বাস্তবায়ন করবে।
সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, খামারি পর্যায়ে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করার মাধ্যমে গবাদি প্রাণীর পুষ্টির যোগান দেয়া। খামারিদের প্রাণীপুষ্টি সংক্রান্ত আধুনিক পদ্ধতি ও কৌশলবিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করা।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উন্নত মানের ঘাস চাষাবাদ শিখতে ৩২ কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এই ৩২ জনের মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ৫ জনের মত কর্মকর্তা থাকতে পারেন। বাকিরা পরিকল্পনা কমিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে প্রস্তাবটি। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রাণীপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাসের চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ নামে। মোট ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পে। এর মধ্যে শুধু ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ সফর বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে স্থায়ী জার্ম প্লাজম নার্সারি স্থাপন করা হবে। এছাড়া খামারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৯৭০টি উচ্চ উৎপাদনশীল উন্নত জাতের স্থায়ী বা অস্থায়ী ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচাঘাস সংরক্ষণের জন্য ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে লাগসই প্রযুক্তি (সাইলেজসহ) হস্তান্তর করা। অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স খাদ্য এবং কৃমিনাশক বিতরণ, কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নির্বাচন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ঘাস চাষ এমন কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। বরং এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করলে দেশ আরও উপকৃত হতো।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘাসের চাষ শিখতে বিদেশ সফরের আয়োজন হাস্যকর। এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবে প্রশ্ন থেকে যায়।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, আমাদের দেশে ঘাস চাষ জনপ্রিয় নয়। ফলে গরুর জন্য আলাদা ঘাসের প্রয়োজন সেটি মানুষের ধারণার মধ্যে নেই। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের ঘাস চাষ ছড়িয়ে দেয়া হবে।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস