চোখের সামনেই হিমালয়ের দ্বিতীয় ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে তেঁতুলিয়ায়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে ছবির মতো ভেসে উঠা এই শেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। তবে এবার বেশ সময় ধরে দেখা যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা তেঁতুলিয়ায় থাকার হোটেল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ে হোটেলে থেকে ভোর বেলায় এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখতে আসেন।
এবার বেশ আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় দেখা যাচ্ছে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলও। সূর্যের আলোর সাথে কখনও শুভ্র, গোলাপী আবার কখনও লাল রঙ নিয়ে বরফ আচ্ছাদিত পর্বত চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। রুপের ছটায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। হেমন্ত ও শীতের এই সময়ে পঞ্চগড় থেকে দেখা মেলে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার। মাউন্ট এভারেস্ট ও কেটু’র পরে এর স্থান। পর্বতের কিছু অংশ ভারতের সিকিম ও কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত।
পঞ্চগড়ের প্রায় সব জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেলেও বেশী স্বচ্ছ দেখা যায় মহানন্দা তীরের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় ভোর ও বিকেল। এসময় পর্বত চূড়াটি পোড়ামাটির রঙ নেয়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে এর রঙ হয় সাদা। যেন আকাশের বুকে এক খন্ড বরফ।
ভ্রমণ পিপাসুরা কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে অনেকেই ভারতের টাইগার হিল পয়েন্টে আবার কেউ কেউ সরাসরি নেপালে যান। তবে যাদের সুযোগ হয় না তারা কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ দেখতে ছুটে যান পঞ্চগড়ে।
প্রতি বছর নভেম্বরে শুরু হয়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও এবছর অক্টোবরের শেষের দিকেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হিমালয়ের তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্যের দেখা মিলছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। দেশের একমাত্র এই জায়গা থেকেই দেখা যায় দূর্লভদৃশ্যটি। এরপরে এক সপ্তাহ বিরতিতপ আর দেখা মিলেনি। তবে আবারও নতুন করে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
বিগত বছর ভালোভাবে দেখা গিয়েছে। এবারও খালি চোখেই দেখা মিলছে কার্শিয়ং, কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়ার অপরূপ দৃশ্য। তাইতো শীত এলেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমাতে শুরু করেছে প্রকৃতিপ্রেমি ও হাজার হাজার পর্যটক।
প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে জড়ো হচ্ছেন তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোতে। কেউ এসেছেন বন্ধুদের সাথে। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। মহানন্দার তীর থেকে কেউ তৃপ্ত দৃষ্টিতে দেখছেন হিমালয়ের দৃশ্য আবার কেউ মুঠো ফোনের সাহায্যে তা ক্যামেরা বন্দি করছেন। কেউ বা তুলছেন সেলফি। মহানন্দার পাড় থেকে এভাবেই চোখের সামনে প্রকৃতির অপরূপ চিত্রছবি অবলোকন করে পর্যটকরা।
সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় হিমালয়ের রূপও পরিবর্তিত হয়। যা প্রকৃতিপ্রেমিদের আরো মুগ্ধ করে। উত্তর আকাশে দেখতে পাওয়া নয়নাভীরাম হিমালয় মূলত বরফে আচ্ছাদিত শুভ্র মেঘের মতো লাগে। তার সাথেই রয়েছে পিরামিডের মতো এভারেস্টের চূড়া। নিচের অংশে কালো ও সবুজ আকৃতির পাহাড়টি মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটকরা জানান, আগে শুধু শুনেছি তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পাহাড় দেখা যায়। কিন্তু এবার বাস্তবে দেখলাম। অসাধারণ এক দৃশ্য। যা না দেখলে কেউ অনুধাবণ করতে পারবেনা। এত কাছে, এত স্পষ্ট আমি কল্পনাই করতে পারিনি।
তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যরিজমের পরিচালক এস কে দোয়েল বলেন,গত কয়েকদিন থেকে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। যদিও বিগত মাস থেকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা আসেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অবলোকন করতে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন’ প্রতি বছর শীতকালে তেঁতুলিয়ায় হাজারো পর্যটক খালি চোখে হিমালয় দেখতে আসে। এখানে এছাড়াও কয়েকটি পিকনিক স্পট, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও চা বাগানসহ কিছু দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। যা সহজেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে তেঁতুলিয়া দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে