ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিঙ্গাপুরের ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন ওমর ফারুকী শিপন

সিঙ্গাপুরে সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বাংলাদেশের ওমর ফারুকী শিপন। তিন ক্যটাগরির মধ্যে ‘পিপলস অব গুড’ ক্যাটাগরিতে এ অ্যাওয়ার্ডটি পান তিনি।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানার বলরুমে প্রেসিডেন্ট হালিমাহ ইয়াকুবের হাত থেকে অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন ওমর ফারুকী শিপন। এসময় সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।

ভালো কাজ মানুষকে বরাবরই সম্মানিত করে তুলে। যার প্রমাণ দিলেন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলার, মতলব উত্তর থানার ওমর ফারুকী শিপন। যিনি ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে জীবিকার অন্বেষে সিঙ্গাপুরে পারি জমান। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক সনামধন্য কোম্পানিতে কর্মরত আছেন।

কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে গৃহবন্দী প্রবাসী শ্রমিকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সরকার ঘোষিত ৩১ জন সম্মানিত ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন। এটি শুধু সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের গর্ব নয়। সারা বিশ্বের সকল প্রবাসীদের গর্ব।

সমগ্র পৃথিবী এক অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের তান্ডব লীলায় যখন উলোট পালোট হয়ে যাচ্ছিলো তখন এর বিস্তার থেকে সিঙ্গাপুরও বাদ যায়নি। একজন দুইজন করে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় বিশ্বের রোল মডেল এই আধুনিক শহর সিঙ্গাপুরে। নিমিষেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের মতো চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিলো। মানুষের মনে মৃত্যুভয় ডুকে যায়। এক অসহনীয় সময় কেটেছে প্রতিটি প্রবাসী শ্রমিকের।

ওমর ফারুকী শিপন এ দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে তিনিও একজন খেটে খাওয়া প্রবাসী। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ‘সিঙ্গাপুরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী’ বা “Bangladeshi Migrant Workers in Singapore” নামে একটি ফেইজবুক পেইজ খুলেন তিনি। যেখানে এ দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন অনুভূতিগুলো তুলে ধরেন।

দেশটির আইন কানুনসহ শ্রমিকদের নানান সমস্যা তার কলমে উঠে আসে। পাশাপাশি সমসাময়িক সকল স্থানীয় খবরের পত্রিকাগুলো থেকে লেখা বঙ্গানুবাদ করে তিনি তার পেইজে আপডেট দেন। ফলে প্রবাসীরা সহজেই পেইজটির প্রতি মনযোগী হয়ে উঠেন এবং কভিড-১৯ চলাকালীন সময় সারাবিশ্বের মহামারির সঠিক তথ্য সেই পেইজ থেকে মানুষ জানতে পারে।

শুধু তাই নয়, এই মহামারি থেকে প্রবাসীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে পেইজে নানান রকম বিষয় নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তাছাড়াও ঐ সময়টায় তিনি প্রতিদিন এক থেকে দুইশ শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন এ দেশের সরকারী বেসরকারি নানান সংস্থা এবং কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটি ফেইজবুক পেইজের মাধ্যমে যে প্রবাসীদেরকে নিঃস্বার্থভাবে উপকার করা যায় তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সাধারণত নিজেদের প্রচারণা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। ফ্রেন্ড ফলোয়ার দুই অংক থেকে তিন অংক হলেই শুরু করি কেক কাটাকাটি, আনন্দ উচ্ছাস। অথচ মানুষের কল্যানে আমরা কতটুকু কাজ করতে পেরেছি তার হিসাব রাখিনা।

তবে আমরা হিসাব না রাখলেও সিঙ্গাপুরের সরকার ঠিকই নজর রেখেছে। তারা মনিটরিং করেছে সিঙ্গাপুরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় কার ভূমিকা কেমন ছিলো। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কে কি ধরনের কাজ করেছে। সব কিছু বিবেচনায় একটি পেইজের নামই বারবার উঠে এসেছে সেটা হলো ‘সিঙ্গাপুরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী’ যার এডমিন ওমর ফারুকী শিপন। যে নিঃস্বার্থভাবে শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করেছে। আয়োজকরা তাকে এই সম্মানজনক পুরষ্কারে ভূষিত করতে কার্পন্য করেনি।

একজন ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডার হয়েও দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রবাসীদের পাশে থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে সহযোগিতা করার জন্য এই সম্মানিত পুরষ্কার গ্রহণ করে তিনি শুধু বাংলাদেশের মুখ উজ্জলই করেননি তিনি এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন ওয়ার্ক পাশ হোল্ডার হিসেবে এই প্রথম পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন।

কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি একজন লেখক ও সাংবাদিক। ২০১৯ সালে Migrant Life; Stories of reverist নামে ইংরেজী ভাষায় একটি বই প্রকাশিত হয় যা বর্তমানে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা ভালোবাসা রইলো।

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন