ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শঙ্কায় দেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মী রফতানি বন্ধ রয়েছে মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ইতালিসহ ইউরোপের সবগুলো দেশে প্রবেশের অনুমতি নেই বাংলাদেশীদের। বড় নির্ভরতার জায়গা সৌদি আরব থেকেও চাকরি হারিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আবার নতুন করে বড় কোনো শ্রমবাজারেও ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ। অন্যদিকে ফ্লাইট সংকটে ছুটিতে আসা কর্মীদের ফেরত যাওয়া ও সৌদিতে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক শ্রমবাজার নিয়ে বৈশ্বিক রাজনীতি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশীদের জন্য ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে উঠছে বিদ্যমান বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলো।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে বৈদেশিক শ্রমবাজারে দক্ষ-অদক্ষ দুই ধরনের কর্মীর চাহিদা আছে। জনশক্তি রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, নেপাল, ভিয়েতনাম ও আফ্রিকার দেশ সুদান। প্রতিযোগী দেশগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি কূটনৈতিক কারণেও অনেক দেশ বাংলাদেশী কর্মী নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, করোনা রিপোর্টে অনিয়মও বর্তমানে একটি প্রধান কারন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশ নেপাল, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকাকে কর্মী নিয়োগে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারগুলো। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি মূলত মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে। কিন্তু মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মী রফতানি বন্ধ থাকায় কর্মী রফতানিতে একটি মাত্র দেশ সৌদি আরবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বিশ্লেষণেও বিষয়টি উঠে এসেছে। বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর (২০১৯) বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় সাত লাখ। এর মধ্যে কেবল সৌদি আরবেই গিয়েছিলেন ৩ লাখ ৯৯ হাজার, যা ওই বছরের মোট কর্মী রফতানির ৫৭ শতাংশ। চলতি বছরও বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার, যা মোট কর্মী রফতানির ৭৪ শতাংশ।

জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত বছর মোট বিদেশে যাওয়া কর্মীর ৯০ শতাংশ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। শুধু সৌদি আরবে গেছেন ৫৭ শতাংশ কর্মী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ওপর নির্ভরতা থাকায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে প্রবাসী শ্রমবাজার। বিশ্বজুড়ে দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে, যা ধরতে পারছে না বাংলাদেশ।

সবচেয়ে বড় নির্ভরতার জায়গা সেই সৌদি আরবই এখন বাংলাদেশী কর্মীদের বিতাড়ন করার হুমকি দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ৪০ বছর ধরে দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেয়ার চাপও দিচ্ছে তারা। না হলে নতুন শ্রমিক নেয়ার ক্ষেত্রে একপ্রকার বাধা দেবে দেশটি। সৌদি আরব থেকে গত ছয় মাসে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে ও কাজ হারিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ৪০ হাজার ৪৯৪ জন প্রবাসী বাংলাদেশী। আর মহামারি করোনার ফলে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগে অর্থাৎ গত এপ্রিলের আগে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন এমন ৫০ হাজারের বেশি সৌদি প্রবাসী কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। দেশটিতে যেতে নতুন যেসব কর্মী প্রক্রিয়াধীন ছিলেন তাদের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন