ফজলে রাব্বি ফরহাদ
শিক্ষাদানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ১০০টিরও অধিক দেশে প্রতিবছরের মতো এবারও ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (Education International- EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। ২০২০ সালে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিপাদ্য হলো “শিক্ষকঃ সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা”। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর সকল শিক্ষককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সালাম। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একদিকে যেমন সম্মানিত অন্যদিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত। সমাজের ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিত্ব।
এই লেখাটি মূলত দেশের আপামর সকল শিক্ষকদের নিয়ে, যারা শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তিল তিল করে গড়ে তুলছেন। লেখাটি সেই সব শিক্ষকদের নিয়ে, যারা শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রম দিচ্ছেন পাঠ দিচ্ছেন পথ দেখাচ্ছেন যাতে করে ছাত্ররা আগামীদিনে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে মানুষের মতো মানুষ হয়ে।
আমরা শিক্ষা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে থাকি যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যদি এটাই হয়, তাহলে সে মেরুদণ্ড ঠিক করে রাখছেন কে? উত্তর আসবে এটাই যে, সেই মেরুদণ্ড ঠিক করে রাখছেন আমাদের নিচের স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং সেখানকার শিক্ষকেরা।
আমাদের মাদ্রাসা-মক্তব, প্রাইমারি বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ডকে শক্তভাবে সোজা করে রাখার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় আর সেই মেরুদণ্ডকে যারা সোজা করে রাখার জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আমাদের সমাজে তাদের অবস্থান কি? আমরা কি তাদেরকে যথাযথ মর্যাদায় আসীন করতে পেরেছি? আমরা কি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু যথাযথভাবে প্রদর্শন করতে পারছি!
শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহান পেশা। অনেকে ভালোবাসার জায়গা থেকে এ পেশাকে বেছে নেন। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে বেশিরভাগ পরিবারেরই কোন একজন অথবা কোন আত্মীয় এ পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু আজকাল কি হচ্ছে? অনেকসময় আমরা পত্রিকার পাতা খুললে দেখতে পাই শিক্ষার্থী কতৃক শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে চলছে অনিয়ম, বাণিজ্য। বেসরকারি বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে। সেখানকার নিয়োগ পেতে হলে দিতে হয় বড় অংকের ডোনেশন তাও আবার বেশ বড় অঙ্কের। সাধারণ ঘরের মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাহলে কিভাবে শিক্ষক হবেন! অনেক মেধাবীরা আবার পূর্ণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরী থেকে বঞ্চিত হন কোটার খপ্পরে পড়ে। শিক্ষকতার এই মহান পেশার নিয়োগে অনিয়ম হওয়া ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য কোন শুভলক্ষণ নয় বরং এই পেশার পূর্ণ নিয়োগ হওয়া উচিত মেধার ভিত্তিতে। তবেই শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে বাড়বে বলে আশা করা যায়।
আমরা হয়তো একদিন এই খারাপ অবস্থান থেকে পাব। আমাদের শিক্ষকসমাজকে সাথে নিয়েই এসব দূর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিহত করতে হবে নিজেদেরই স্বার্থে। সেই সঙ্গে এবার বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের এই অঙ্গিকার হোক যে, আমরা সকলে মিলে একটি সময়োপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।
এত সব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও যেসব শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছি কিংবা বর্তমান অবস্থান পর্যন্ত আসতে পেরেছি বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সেসব গুরুজনদের জানাই শ্রদ্ধা ও সালাম। গ্রহণ করি তাদের চরণধূলি।
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার এক দেশ। এতসব প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও আমরা যদি শিক্ষকসমাজ, সচেতনসমাজকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্যে শিক্ষক নিয়োগে এবং শিক্ষাক্ষেত্রের এসব অনিয়মকে দূরীভূত করতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশের আগামীর দিনগুলো হবে আরো অনেক বেশি সুন্দর, মানবিক ও কল্যাণকর। এ দেশ প্রস্ফুটিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলায় আর পূর্ণ হবে হাজারো বাঙালির স্বপ্ন।
লেখক: ফজলে রাব্বি ফরহাদ
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আনন্দবাজার/শাহী/রাব্বি