শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘এ ওম্যান লেফট লনলি’

ব্লুজ রক মিউজিকের মহাকাব্যে অন্যতম নারী জেনিস জপলিন। সংগীতশিল্পী হিসেবে জেনিস খুবই সাহসী, মেধাবী, এবং বিপ্লবী। বলা যায়, ষাটের দশকে সাইকেডেলিক রক শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তিনিই প্রথম নারী। এছাড়াও তিনি তাঁর মন্দ্র সুরেলা কন্ঠের (মেজ্জো ‍সপ্রানো) জন্য সেইসময়ে অসংখ্য শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

এ প্রতিভাবান শিল্পীর জন্ম আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের পোর্ট আর্থারে। ছোটবেলা থেকেই ব্লুজ ও লোকসংগীতের প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। টেক্সাসের বিভিন্ন মিউজিক বারগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন আর কৃষ্ণাঙ্গদের ব্লুজ ও জ্যাজ মিউজিক শুনতেন জেনিস। বিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ ব্লুজ ও লোকসংগীত গায়িকা ওডেটা হোমস ও বেসি স্মিথ ছিলেন তাঁর সংগীত জীবনের আদর্শ।

স্বল্পস্থায়ী জীবনের অল্প সময়ে তিনি যে সুরের সাম্রাজ্য গড়েছেন, সংগীতজগতের জন্য তা এক বিরাট সম্ভার। সংগীতানুরাগীদের জন্য রেখে গেছেন বেশকিছু কালজয়ী গান যা তাদের হৃদয়ে চিরকাল গেঁথে থাকবে। উল্লেখযোগ্য কিছু গান যেমন- ক্রাই বেবী, গেট ইট হোয়াইল ইউ ক্যান, হ্যাফ মুন, ডাউন অন মি, সামারটাইম, মারসিডিস বেন্জ ইত্যাদি। তাঁর গাওয়া সর্বশেষ গান মারসিডিস বেন্জ।

১৯৬০, সংগীতের নেশায় মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন জেনিস। এরপর শুরু হয় সংগ্রাম, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কখনও থেমে থাকেননি জেনিস। একের পর এক গান রিলিজ করে অর্জন করেছেন বিশ্ব খ্যাতি। এরপর, ১৯৬৬ সালে সান ফ্রান্সিস্কোর বিখ্যাত ‘বিগ ব্রাদার অ্যান্ড হোলডিং কোম্পানি’ ব্যান্ডে লিড ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেন জেনিস জপলিন।

জেনিস জপলিন

১৯৬৭, সারাবিশ্বে বিরাজ করছিলো টালমাটাল পরিস্থিতি, ইতিহাসের গায়ে লেপ্টে দেয়া হয়েছে নিদর্শনমূলক কিছু মৃত্যুনামাবলী, ঘেঁটে যেতে শুরু করেছে মানুষ, সমাজ, চিন্তা, চেতনা,ও মূল্যবোধ। সেইসময়ে, ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি কাউন্টি ফেয়ার গ্রাউন্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ ভিড়, এরমধ্যে বেশিরভাগই ছিল হিপ্পি ছেলেমেয়েরা। ‘আর্ন্তজাতিক এ মন্টেরে পপ ফেস্টিভ্যালে’ অংশগ্রহন করেছিলেন জেনিস জপলিন, জিমি হেনড্রিক্স, দ্যা বিটলস’র গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন সহ বিখ্যাত সেতারবাদক রবি শঙ্কর চৌধুরীও।

আরও পড়ুনঃ  'বাংলার গায়েন' এ সেরা ৩০ এ জবির সৈকত

এ পপ ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ তাঁর জীবনে এনে দেয় আরও বেশি খ্যাতি ও পরিচিতি। ১৯৬৮, তাঁর নিজস্ব বাদকগোষ্ঠী ‘কসমিক ব্লুজ ব্যান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু করেন সলো ক্যারিয়ার। ১৯৬৯, ঐতিহাসিক ‘উডস্টক ফেস্টিভ্যাল’-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন জেনিস জপলিন। তিনি ছিলেন তৎকালীন হিপ্পি তৎপরতা ও তার সংস্কৃতি এবং শান্তির জোরালো সমর্থক।

মাত্র চার বছরের সংগীত জীবনে ব্লুজ রক, সাইকেডেলিক রক, সোল, আর লোক সংগীতের সংমিশ্রণে এক নতুন আঙ্গিকের সুদক্ষ ও সৃজনশীল সংগীত উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সংগীত ও সাফল্যের পাশাপাশি চরম মাদকাসক্তও ছিলেন জেনিস। তিনি এলএসডি, হেরোইন, কোকেনসহ অনেক দামি দামি মাদক গ্রহণ করতেন। আর এ মাদকাসক্তির পরিনামে ঘটে তাঁর মৃত্যু। ১৯৭০ সালের ৪ অক্টোবর, লস অ্যাঞ্জেলসের এক হোটেল রুমে মাত্রাতিরিক্ত হোরোইন নেয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ২৭ বছর বয়সী সংগীত সম্রাজ্ঞী জেনিস জপলিন। তাঁর মৃত্যুর তিন মাস পর প্রকাশিত হয় শেষ অ্যালবাম ‘পার্ল’।

 

 

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন