মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চীন। গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের একচ্ছত্র আধিপত্য ব্যবহার করে প্রতিযোগীদের দমিয়ে রাখার অভিযোগে এই তদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত বছরই গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ট্রাস্ট মামলার প্রস্তাব করে চীনের টেলিকম যন্ত্রপাতি নির্মাতা হুয়াওয়ে টেকনোলজিস। প্রস্তাবটি চীনের শীর্ষ বাজারনিয়ন্ত্রক স্টেট কাউন্সিলের অ্যান্টি ট্রাস্ট কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য জমাও দিয়েছিল হুয়াওয়ে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অক্টোবরেই অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এবং তা ওয়াশিংটনের সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতীয় সুরক্ষার ঝুঁকির কথা বলে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দমন করার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তারই অনুসরণে চীন গুগলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য তদন্ত করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও টিকটকের মালিক বাইটড্যান্সকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
চীনের পক্ষ থেকে অ্যান্টি ট্রাস্ট আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ জরিমানা ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি বিচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
চীনের সম্ভাব্য অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তে গুগলের বিরুদ্ধে বাজার দখলে হুয়াওয়ের মতো চীনা কোম্পানির চরম ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারে। হুয়াওয়ে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সমর্থন না পাওয়ায় ব্যাপক বিশ্বস্ততা ও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত গুগল ও হুয়াওয়ের কেউ মন্তব্য করেননি। এ ঘটনায় চীনের বাজারনিয়ন্ত্রক স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর মার্কেট রেগুলেশন ও স্টেট কাউন্সিলেরও কেউ মন্তব্য করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় হুয়াওয়েকে কোনো কারিগরি সাহায্য করতে পারছে না গুগল। এতে হুয়াওয়ে গুগলের মোবাইল সেবাগুলো পাচ্ছে না। গত আগস্ট মাসে হুয়াওয়েকে সেবা দেওয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে গুগল।
চীনের সম্ভাব্য অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তে গুগলের কোন কোন সেবা পড়তে পারে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অধিকাংশ চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন সোর্স অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ ব্যবহার করে। চীনে গুগল সার্চ, ই-মেইল অন্য সেবা বন্ধ।
হুয়াওয়ে জানায়, গত বছরে হুয়াওয়ে তাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার কম আয় করেছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপ জড়িত রয়েছে। গুগলের ওপর নির্ভরতা কমাতে গত মাসেই হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে আছে নিজস্ব হারমনি অপারেটিং সিস্টেম-সুবিধা, যা আগামী বছরে নতুন স্মার্টফোনে যুক্ত করবে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তের ক্ষেত্রে ইউরোপ ও ভারতের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে চীন। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্তে অন্যান্য দেশে গুগলের ক্ষেত্রে যে নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে, চীন তা অনুসরণ করবে। ২০১৮ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমিয়ে রাখার চর্চা করায় গুগলকে ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে।
আনন্দবাজার/এফআইবি
