ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিহীনদের বোবা কান্না

খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের ভুমিহীণদের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে দিন কে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে পাইকগাছা, কয়রা সহ আশে-পাশের উপজেলা গুলো। ১৯৭০ সালে উল্লেখিত এসকল উপজেলায় শতকারা ভুমিহীনদের সংখ্যা ছিল ৫০ জন। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক ভূমিহীন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে অনেক গুলো কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমিহীনদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিহীন হওয়ার নেপথ্য পাঁচটি কারণ রয়েছে।

জনসংখ্যার চাপ ও বিকল্প কর্মসূচি বা কর্মসংস্থানের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙ্গন, মিথ্যা মামলা, কৃষি ব্যাংকের চক্রবৃদ্ধি সুদ ও মহাজন শোষণ প্রক্রিয়া। উৎপাদনের আয় ব্যয়ের সামঞ্জস্যহীনতা কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রতি বছর হাজার বাস্তুভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। মিথ্যা মামলার খরচ যোগাতে গিয়ে জাগয়া জমি বিক্রি করতে হয়।

ঋণের জালে বন্দী হয়ে ব্যাংকের লাল নোটিশ পেয়ে ভুমিহীনরা দিশেহারা। ভূমিহীনরা জমি বিক্রি করে সর্বস্ব খুয়ে কেউ ভিক্ষে করছে। কেউ বা শহরে গিয়ে রিক্সা চালাচ্ছে। শিল্প ভিত্তিক তেমন কর্মসংস্থান না থাকায় পাশাপাশি কৃষি ও চরাঞ্চল ভিত্তিক অর্থনীতি অনেকটা বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা ও অনাবৃষ্টি সংকুচিত করেছে আয়ের উৎস গুলোকে। মুলত এসবের কারণে খুলনা জেলার শীর্ষ দারিদ্র প্রবণ উপজেলা হয়ে উঠেছে পাইকগাছা, কয়রাসহ আশ পাশের উপজেলা।

হতদরিদ্র মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ছেন। আবার খুলনা জেলাটি কর্মহীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে শিল্প কারখানাভিত্তিক কোন কর্মসংস্থান নেই। কাজে অন্য জেলায় গিয়েও ভাল কাজ করতে পারছে না স্থানীয়রা। আবার দুর্যোগ প্রবণ এলাকা এখনো আধুনিক কৃষি সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে মানুষ দাঁড়াতে পারছে না। ফলে উল্লেখিত উপজেলা সমূহ ৬৫% জন ভূমিহীন। ৩ বেলা খেতে পারে না ৪০% পরিবার।

পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় নদীর তীরে দীর্ঘ ওয়াপদা মাটির বাঁধ রয়েছে। বাঁধের ধারে খুপড়ির মত ছোট ছোট ঘর বেঁধে বসবাস করছে হাজার হাজার ভূমিহীন পরিবার। কেউ এসেছে অনেক দিন ধরে, কেউ এসেছে হালে। একদা এদের জমি জেরাত ছিল। নানাবিধ সংকটের কারণে সম্পূর্ন ভূমিহীনরা কোন মতে মজুরী করে দিনাতিপাত করছে। নিয়মিত কাজ মেলে না, মিললেও মজুরীর হার কম। উপোস কাপসে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কর্মসংস্থান, পুর্নবাসন চেয়ে স্থানীয় প্রশাসন, এমপি সহ সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কৃপা প্রার্থনা করেছেন ভূমিহীনরা।

সুধীসমাজ বলছেন, আমাদের সমাজে ভূমিহীনদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যারা বন্দোবস্ত পেয়েছেন তারা একাধিক নামে বেনামে করছেন। তারা বৃত্তশালী, ক্ষমতাশালী, জোতদার। ভূমিহীনদের পাশে কেউ নাই। বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের ব্যাপারে সচেষ্ট। কিন্তু দালালদের খপ্পর আর দুর্নীতিসহ নানাবিধ জটিলতা, প্রভাবে প্রকৃত ভূমিহীনরা বিব্রত।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, বর্তমান সরকার ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন, পুর্নবাসনও করছেন। এলাকায় ভূমিহীনদের ব্যাপারে খাসজমি বিতরণের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিনা? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, এরকম ভূমিহীন কেউ থাকলে আবেদন করলে, আবেদনের প্রেক্ষিতে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/ইমদাদ

সংবাদটি শেয়ার করুন