রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাং কালচারে এখন অভিজাত কিশোররা, ভিড়ছে কিশোরীরাও

বর্তমানে ঢাকার উত্তরায় টোকাইদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ‘গ্যাং কালচারে’ জড়িয়ে পড়েছে অভিজাত পরিবারের সন্তানরাও। র‌্যাবের অব্যাহত অভিযানে মাঝেমধ্যেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা গ্রেপ্তার হচ্ছে, আবার জামিনে বেরিয়ে এসে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের বেশির ভাগ সদস্য অভিজাত পরিবারের সদস্য হওয়ায় তারা দ্রুত জামিনও পেয়ে যায়।

জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ে একাধিক কিশোরীও রয়েছে। এদের দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয় বিত্তবান ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে আদায় করা হয় টাকা। আবার বিত্তবান পরিবারের মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের দিয়ে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন পর্ন ভিডিও। সেগুলো পরিবারের কাছে পাঠিয়েও আদায় করা হয় বড় অঙ্কের টাকা।

মূলত মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতেই উত্তরায় গড়ে তোলা হয়েছে এসব গ্রুপ। সেখানে প্রথম কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটে ২০০১ সালে। টঙ্গীর বউবাজার এলাকার টোকাই রহিমের হাত ধরে, যে মাদক বিক্রির সাথে জড়িত। এরপর প্রায় ১২ বছরে ৩০টির মতো কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে। ২০১২ সালে এসে বিভিন্ন গ্রুপ নাইন স্টার এবং ডিসকো বয়েজ নামে সক্রিয় হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, কয়েকজন সাংবাদিক, ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উত্তরার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাংগুলো বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। তাদের নির্দেশে অপরাধেও জড়াচ্ছে। সম্প্রতি ‘টিকটক’ ও ‘লাইকি’ তারকা হিসেবে ইয়াসীর আরাফাত অপু এক পথচারীকে মারধর করে আটক হয়েছে। এরপর পুলিশ বলেছে, অপু ও তার সাথীরা কিশোর গ্যাং হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালাচ্ছিল।

আরও পড়ুনঃ  পেঁয়াজের লাগামহীন দর বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন

উত্তরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, র‌্যাব-পুলিশের তৎপরতার পরও এখন উত্তরা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে ১০টি কিশোর গ্যাং। তবে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আদনান কবীর হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় উঠে আসে উত্তরার কিশোর ‘গ্যাং কালচার’। ফলে নড়েচড়ে বসেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।

উত্তরার মাইলস্টোন, উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নবাব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অভিজাত পরিবারের বখাটে সন্তানদের দলে টানে কিশোর গ্যাং। প্রযুক্তির প্রসার ঘটার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যাও আরও বাড়তে থাকে।

দলবেঁধে বাঁশি বাজিয়ে মোটরসাইকেলের মহড়া দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন এবং মাদক বিক্রি করা, আধিপত্য বজায় রাখতে খুনখারাবি, মারামারি করার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এসব গ্রুপের সদস্যরা।

এই ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মাদ শরিফুর রহমান জানান, অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে পরিবারের অজান্তেই তাদের সন্তানরা কিশোর গ্যাংয়ে বেপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। প্রথমদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এদিকে নজর দেয়নি। তত দিনে বড় ধরনের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তবে এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গ্যাংগুলো অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন