পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর কৃষকলীগ সভাপতি এসএম মরতুল্লা সৌরভ ওরফে মনু সিকদারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মসজিদ, মাদরাসার সম্পত্তি জোর-জবরদখলসহ অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান ও পরিবারবর্গ।
শনিবার বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন মনিবুর রহমান। এসময় সুনির্মল হাওলাদার, হাজী ওয়াজেদ আলী মাস্টারবাড়ী মসজিদ কমিটির হারুন হাওলাদার, হাজী ওয়াজেদ আলী ওয়াকফ স্টেট’র এম রিফাত ইসলাম, খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নাছির উদ্দীন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মনিবুর রহমান বলেন, কলাপাড়া পৌর-কৃষকলীগ সভাপতি এসএম মরতুল্লা ওরফে মনু সিকদার দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মসজিদ, মাদরাসা, সংখ্যালঘু মানুষের জমি দখল ও চাঁদাবাজি করে আসছেন। এলাকার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে দমনপীড়ন করছেন। বায়োজ্যেষ্ঠসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে শারীরিক নির্যাতন, সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা না দেওয়া, মাদক ও অনৈতিক কর্মকান্ড তার নিত্য দিনের কাজ।
মনিবুর রহমান বলেন, তার মা নুরজাহান সিকদারের জমির সাথে খেপুপাড়া নেসারুদ্দিন ফাযিল মাদরাসার সুবিধার্থে মাদরাসার স্থাবর সম্পত্তির এওয়াজবদল হয়। এওয়াজ বদলের পর ১৯৫৩ সাল থেকে তারা বাড়ীঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। একই সম্পত্তি থেকে আল-হেরা জামে মসজিদ ও দারুল ইহসান মডেল মাদরাসা ও দারুল ইহসান হিফজুল কুরআন মাদরাসা জায়গা দান করেছি। চলমান এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিচু পতিত জমি বালু ভরাট করলে লোভাতুর দৃষ্টি পরে সৌরভ সিকদারের। জমি দখলের উদ্যেশে প্রকাশ্যে একদল গুন্ডা নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাজ বন্ধ করে দেয়, প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড পুকুরে ফেলে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। অন্যথায় মারধোর ও হত্যার হুমকি দেয়। সৌরভের সাথে জমির কোনো ধরণের সম্পর্ক না থাকলেও সম্পূর্ণ দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে জোর-জবরদখল করার জন্য গত ৬মাস ধরে তাদের পরিবারকে হয়রানী করছে। এনিয়ে ওই জমিতে কলাপাড়া বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের চিরন্তন নিষেধাজ্ঞা মামলা চলমান রয়েছে। যার মামলা নং ১৯৩/২০।
হিন্দু পরিবার পরিমল গংদের পক্ষ থেকে সুনির্মল হাওলাদার বলেন, বাবা কালিকান্তের ক্রয়সূত্রে পাওয়া জমি ৭০ বছর ধরে ভোগ দখলে থাকলেও কয়েক বছর আগে জমির সীমানা ভেঙ্গে দিয়েছে সৌরভ। জমিতে ঘর তুলতে গেলে বাধা প্রদান করে। ২০১১ সাল থেকে মামলা (মামলা-৩৭/২০১১) চললেও তার হামলার ভয়ে মুখ খুলতে পারছি না। মামলা ৩৫ নং খতিয়ান থেকে হলেও সৌরভ ৭৯ নং খতিয়ানের জায়গা যার সকল দালিলিক কাগজপত্র, বিএস পর্চা থাকলেও শুধু হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই দাগেও সে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। যাদের কাছে হিন্দুপরিবারটি জমি বিক্রি করেছে তাদেরকে ভোগ দখল করতে দেয় না।
খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নাছির উদ্দীন হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৭২ বছরের দখলকৃত মাদরাসা ক্যাম্পাসের ভিতরের ৯৮৩ নং দাগের ২.২৭ একর জমি ২০০৯ সাল থেকে দখলে নেওয়ার জন্য সৌরভ ও তার পরিবার বিভিন্ন মানুষের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে হয়রানি করছে। বিভিন্ন সময় অধ্যক্ষসহ-শিক্ষকদের লাঞ্চিত করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে হামলার চেষ্টাও করেছে। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করার ঘটনা অতীতে একাধিকবার ঘটেছে।
হাজী ওয়াজেদ আলী মাস্টারবাড়ী মসজিদ কমিটির হারুন হাওলাদার বলেন, ২০১৭ সালে মসজিদের জমি দখলের জন্য বে-আইনিভাবে অনুপ্রবেশ করলে সৌরভ সিকদারসহ সকল বিবাদীদের নামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ১১/২০১৯ নং ভায়োলেশন মামলা দাখিল করা হয়েছে। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে এসএম মরতুল্লা সৌরভ ওরফে মনু সিকদার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পারিবারিক বিরোধকে পুজি তার পরিবারের দীর্ঘদিনের ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক পরিচয়কে বির্তকিত করার জন্য একটি চক্র ষড়যন্ত্রে নেমেছে।
আনন্দবাজার/এফআইবি