ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালভার্টে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার,পানিবন্দী তিন শতাধিক পরিবার

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় তেতুল তলা মোড় সংলগ্ন একটি কালভার্টের মুখে মাছ শিকারের উদ্দেশ্য অবৈধভাবে গাইড ওয়াল তুলে বাঁধ দিয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারকে পানি বন্দী করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ঈদ্রীস আলী,ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম,মফি,কাফী,বাকী সহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে।

দলীয় পরিচয় আর স্থানীয় প্রভাব ও ক্ষমতার বলে স্থানীয় কয়েকজন মিলে শুকনো মৌসুমে রাতের আঁধারে রড,সিমেন্ট ও কনক্রিট দিয়ে তোলেন ১০ ফিট উচ্চতার এক সুবিশাল দেয়াল। তবে পানির প্রবল স্রোতেও এখনো অক্ষত আছে দেয়ালটি।

ঘটনাটি ঘটেছে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের আরাজী মাড়েয়া সরকার পাড়া গ্রামে।

স্থানীয় প্রভাব ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে উজানে দেয়াল দেয়ায় পানি বন্দী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। এনিয়ে একাধিক বার শালিস হলে বাঁধ সরিয়ে নিতে রাজি হলেও পরে তা আর করেননি আওয়ামী লীগ নেতা ঈদ্রীস আলী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ওই এলাকার মানুষের বসত বাড়িতে এখনো হাঁটু পানি। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা,আমন ধানের চারাগাছ।সেই সাথে রান্না ঘরের চুলা,খড়ি,লাকড়ি সবই এখন পানির নিচে। চুলা জালিয়ে রান্না করে খেতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
এদিকে পানি বন্দী হওয়ায় বয়স্ক,শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী নিয়ে বিব্রত অবস্থায় দিন কাটছে তাদের।

স্থানীয় কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান,আমরা এর আগে কখনোই পানি বন্দী হয়ে পড়িনি। এবারেই প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ঈদ্রীস আলী, ইসলাম মহাজন সহ ১০-১২ জন মিলে ভাঁটির দিকে একটি কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। তাদের এ শখের কারণে আমাদের বাসায় পানি উঠেছে। আমার আমন ধানের বীজতলা ও আমন ধানের চারাগাছ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। এখন আমরা কি করবো,কিভাবে চাষাবাদ করে বাঁচবো। দ্রুত বাঁধ না সড়ানো হলে আমাদের এবার না খেয়ে মরতে হবে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ওই এলাকার রাবেয়া সুলতানা নামে এক গৃহীনি জানায়,তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর আগে। বিয়ের পর থেকে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখেননি তিনি। এবারের আমন মৌসুমের আগে স্থানীয় কয়েকজন মিলে তেতুল তলা কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। তাদের কারণে আমরা এখন বিপদে পড়েছি।আমরা চুলা জ্বালাতে পারিনা,রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারছিনা।ঘর থেকে বের হলে সর্বত্র পানি আর পানি। দেখলে মনে হয় সমুদ্রে বাস করছি। আমরা এভাবে আর কতদিন থাকবো। আমরা ওই কালভার্টের মুখে অবৈধ বাঁধের দ্রুত অপসারণ চাই।

এনিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ঈদ্রীস আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা বড়শশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ময়ূর আলীর মৌখিক অনুমতি নিয়ে কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়েছি। অন্য আর কারো অনুমতি নেইনি।তবে আমাদের জমিগুলো কালভার্টের মুখে হওয়ার কারণে ঠিকমত পানি থাকেনা।তাই আমন ধান যাতে ভালভাবে রোপন করা যায় ও ফলন ভালো হয় এ উদ্দেশ্যই বাঁধ দেয়া।

বড়শশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বলেন,কালভার্টের মুখে বাঁধ দেয়া নিয়ে আমি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহাব সহ একাধিকবার বিচার-শালিস করেছি। ঈদ্রীস ও সাঙ্গপাঙ্গরা আমাদের কোন কথাই শোনেনি। জেলা পরিষদের সদস্য ময়ূর সাহেব বিষয়টি জানেন।তিনিও এসেছিলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কিন্তু তারা কারো কোন কথাই শোনেনি। এ ব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলায়মান আলী জানান,আমি বিষয়টি ইতিমধ্যে জেনেছি।আগামীকাল আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

আনন্দবাজার/রায়হান

সংবাদটি শেয়ার করুন