মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, বাংলাদেশও সেই আঘাতে জর্জরিত। প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তবে এমন পরিস্থিতির মাঝেও থেমে নেই বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। চলতি বছরের মধ্যে প্রথম রিঅ্যাক্টর বসানোর জন্য সকল ধরনের কাজ চলমান রয়েছে এবং এ বছরের মধ্যে প্রথম রিঅ্যাক্টরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতা ও তত্মাবধায়নে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুই ইউনিট বিশিষ্ট প্রকল্পের নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্পে কাজ করছেন দেশি-বিদেশী আট হাজার থেকে দশ হাজার প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা-কর্মচারী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আলাদা আলাদা শিফটে কাজ চলছে।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, গত ৬ই জুন থেকে প্রথম ইউনিটের রিয্যাক্টর ভবনের ইনার কন্টেইনমেন্ট (আইসিডাব্লিউ) এর ঢালাইয়েরে কাজ শুরু হয়েছে। ইনার কন্টেইনমেন্টের (অভ্যন্তরীণ কন্টেইনমেন্ট) এটা তৃতীয় ধাপ। এরপর চতুর্থ অর্থাৎ শেষ ধাপের কাজ শুরু হবে। এই ইনার কন্টেইনমেন্টের কাজ শেষ হওয়ার পর এরই উপরে ডুমস স্ট্যাকচার স্থাপন করা হবে। এর পরপরই এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপন করা হবে। এই রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হার্ট বলা হয়।
অপরদিকে, রাশিয়াতেও এই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে বেশকিছু যন্ত্রপাতির কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ায় নির্মিত যন্ত্রপাতিগুলো প্রতিনিয়ত দেশে আসছে। জাহাজে মংলা বন্দরে আসার পর সেখান থেকে নদী পথে রূপপুর আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবার জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ডুমস স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে। এর পরপরই এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপন করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে সার্বিকভাবে এ প্রকল্পের প্রায় ২৮ থেকে ২৯ ভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের মধ্যেও প্রকল্পের কাজে সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবার জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ চলছে। এখানে যারা কাজ করছেন তাদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশমুখে প্রতিদিন থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কারো মধ্যে কোনো ধরনের উপসর্গ পেলে সাথে সাথে তাকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। বতর্মানে প্রকল্প এলাকায় কর্মরত কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
ড. শৌকত আকবার জানান, দেশি-বিদেশি কোনো কর্মী যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হন তার জন্য নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রকল্প সাইটের সব প্রবেশ পয়েন্টসহ অফিস বিল্ডিং ও ক্যান্টিনের প্রবেশ পয়েন্টে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার সবখানে সার্বক্ষণিক পরিচালিত হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। সব কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রাস্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন-রোসাটম। এই প্রকল্পে রাশিয়ার সর্বাধুনিক থ্রি প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর ভিত্তিক দু’টি ইউনিট স্থাপন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
আনন্দবাজার/শাহী/শার