শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাওয়া গেছে রেড জোন লকডাউনের সুফল

করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করার সুফল পাওয়া গেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন এ কথা জানিয়েছেন।

মুশতাক হোসেন বলেন, এখন ঢাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই। এর সুফল মিলছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড গত ১৩ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করা হয়। পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এখনো লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে দেখা গেছে সংক্রমণের মাত্রা সেখানে অনেকটাই কমে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, প্রথম দিকে যেমন বেশি বেশি ছিল সংক্রমণের হার এখন তেমন নেই। আগের চেয়ে টেস্টও অনেক বাড়িয়েছি। এখন যেই নমুনা দিতে চান, তারটাই আমরা নিচ্ছি। এসব লোক হয়তো অন্যের সংস্পর্শে গেছেন। কিন্তু পজিটিভ লোক খুব কমই পাচ্ছি।

এছাড়া এখন পর্যন্ত যেসব এলাকাকে রেড জোন করে লকডাউন করা হয়েছিল তার সবখানেই এমন সুফল পাওয়া গেছে।

করোনা প্রকোপের শুরুতে ১৯ মার্চ প্রথম লকডাউন করা হয় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেই সময় লকডাউনের সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। মাদারীপুরের চার উপজেলার মধ্যে এখন সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে কম আক্রান্ত শিবচরে। ওই লকডাউনের সময় যে কাজ হয়েছে তা অনন্য। লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার আইইডিসিআর থেকে একটি চৌকষ দল আসে। তারা স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে ঘরে ঘরে গিয়ে সন্ধান চালায়। মানুষের এক ধরণের ওরিয়েন্টশন হয়। এর ফল আমরা পেয়েছি। আমরা সংক্রমণ কমাতে সমর্থ হয়েছি। লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনঃ  ৬ মাসের বেশি কুয়েতের বাইরে থাকলে ভিসা বাতিল!

শিবচেরর পরপরই ২৩ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের টোলারবাগ এলাকায় লকডাউন করা হয়। ২১ ও ২২ মার্চ পর পর দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রাজধানীর বেশি সংক্রমিত এলাকার মধ্যে একটি ছিল এই টোলারবাগ। এই তিন হাজার জনসংখ্যার এলাকায় আক্রান্ত ছিলেন ১৭ জন। ১০ এপ্রিলের মধ্যে সবাই সুস্থ হয়ে ওঠে।

ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজারে এখনো লকডাউন চলছে। এলাকাটিতে থাকেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এখানে ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হলে ৯ জুন মধ্যরাত থেকে এই রেড জোন এলাকায় লকডাউন শুরু হয়। ৩০ জুন এই এলাকায় লকডাউনের ২১ দিন পূর্ণ হবে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান বলেন, এ এলাকায় প্রথমে ৩১ জন সংক্রমিত ছিল। তিন দিনে বেড়েছে আরও ১৯ জন। এরা আগে থেকেই আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু টেস্ট করেননি। সন্দেহজন যাকে মনে হয়ে তাকেই টেস্ট করেছি। প্রথম ১৪ দিনে ৩৫ জন সুস্থ হয়ে গেছে। বাকি ১৫ জনের মধ্যে আটজন সুস্থ হয়ে গেছে। বাকিরাও সুস্থ, তবে তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট আসলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

পূর্বরাজাবাজারে আইইডিসিআরের কার্যক্রম নিয়ে সংস্থার উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, প্রথমে আইইডিসিআর ২০ জনকে ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেয়। পরে মোট ২০০ স্বেচ্ছাসেবী এখানে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা ভালো ফলাফল পেয়েছি।

এছাড়া ঢাকার বাইরে নরসিংদীর মাধবদী, ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও মিলেছে লকডাউনের সুফল।

ঢাকার রেড জোন চিহ্নিত অন্যন্য এলাকা লকডাউন করা নিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, এখন অনেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘ্ন হবে বলে অজুহাত দেখান। কিন্তু লকডাউন করে রোগ না নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আমরা আরও ভয়াবহ বিপদে পড়ব।

আরও পড়ুনঃ  ভালুকায় সেলাই মেশিন বিতরণ

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, আগে বাাঁচতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ না হলে অর্থনীতিও সবল হবে না। শুধু দেশের না আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে আঞ্চলিক লকডাউন নয়। চিহ্নিত এলাকাগুলোতে একযোগে লকডাউন করতে হবে।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন