ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার আইনে ওয়েব সিরিজ প্রচারের ব্যাখ্যা চায় তথ্য মন্ত্রণালয়

নিজেদের প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রচারিত ওয়েব সিরিজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য অধিদপ্তর থেকে গত বুধবার কোম্পানি দুটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো চিঠিতে ‘সেন্সরবিহীন, নগ্ন ও অশালীন দৃশ্য, কাহিনী ও সংলাপ’ সংবলিত ভিডিও কন্টেন্ট প্রচারকে আইনের (চারটি) পরিপন্থি উল্লেখ করে ব্যাখ্যা দিতে সময়ও বেঁধে দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সেন্সরবিহীন, নগ্ন ও অশালীন দৃশ্য, কাহিনী ও সংলাপ সংবলিত ভিডিও কন্টেন্ট প্রচার দেশের প্রচলিত আইন যেমন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন, ২০১০ এর ৬৯ ধারা, পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ৪ ও ৮ ধারা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর পেনাল কোড, ১৮৬০ এর সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কন্টেন্টগুলো আপলোড এবং প্রচার করার জন্য গ্রামীণফোন ও রবির কোনো সরকারি নিবন্ধন বা অনুমোদন আছে কিনা তা জনাতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গ্রামীণফোন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, তাদের কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ধরনের কোনো কন্টেন্ট প্রচারিত বা প্রকাশিত না করার ব্যাপারে তারা সদা সতর্ক থাকি এবং এ ব্যাপারে তাদের পার্টনারদেরও নিয়মিতভাবে সতর্ক করা হয়। গ্রামীণফোন সবসময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে সচেতন এবং শ্রদ্ধাশীল। অশ্লীল ও নীতিবিরুদ্ধ কন্টেন্টের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সম সময়ই কঠিন।

বিশ্বের নানা দেশের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়েব সিরিজ। তবে তা রাষ্ট্রীয় প্রচলিত তদারকি ব্যবস্থার আওতায় নেই বলে কী নিয়মে তা প্রচারিত হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশেও উঠেছে প্রশ্ন। সম্প্রতি কয়েকটি ওয়েব সিরিজের কন্টেন্ট নিয়ে সমালোচনা উঠলে তা নিয়ে শিল্পী-কলাকুশলীদেরও দ্বিধাবিভিক্তি দেখা দেয়। এক পক্ষ ওয়েব সিরিজের পক্ষে বিবৃতি দেন, অন্য পক্ষেও বিবৃতি আসে তা বন্ধের জন্য।

অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এখন ওয়েব সিরিজে যা দেখানো হচ্ছে দেশ এটা দেখার জন্য প্রস্তুত না। শ্লীলতা বা অশ্লীলতাই একটা আপত্তির জায়গা। দুর্নীতি বা এ ধরনের অনাচার নিয়ে কিন্তু এসব সিরিজ হয়না, হয় সেক্স আর ভায়োলেন্স নিযয়ে। তার অভিযোগ, এখানে যে ওয়েব সিরিজ হয়েছে সেখানে এমনও হয়েছে যে ভাষার চরম বিকৃতি ঘটানো হয়েছে কিন্তু টেলিভিশন কি এভাবে আমরা শূন্যে ছেড়ে দিবো?

এই কথার প্রেক্ষিতেই তরুণ নির্মাতা ও লেখক আশফাক নিপুণ বলেছেন, ওয়েব সিরিজ টেলিভিশনের মতো কোনো মাধ্যম না। ওয়েব সিরিজ দেখার জন্য আপনাকে কয়েক ধাপ পেরিয়ে সেটি কিনতে হবে। এটি একটি সেন্সর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আপনি কোনটি দেখবেন সেটি আপনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। ধরুন কেউ যদি মনে করে যে আমি হরর মুভি দেখবোনা তাহলে তিনি সেই কনটেন্ট দেখবেন না। কিন্তু তাই বলে তিনি তো দাবি করতে পারেন না যে হরর মুভি সরিয়ে দিন।

এই বিতর্কের মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়েব সিরিজে কাঁচি চালানোর পাশাপাশি কয়েকটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একধিক ওয়েব সিরিজ। কনটেন্টগুলো ওপেন ওটিটি প্লাটফর্মে (ইউটিউব) আসার জন্য পাইরেসি আইন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে কপিরাইট আইনে সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম ও সাউন্ড রেকর্ডিং বিষয়গুলো আছে। আইন ভঙ্গে জেল-জরিমানার বিধানও আছে। তাই পাইরেসি আইনের আওতায় ওয়েব সিরিজের পরিচালক, প্রয়োজক বা প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের মামলাও করার সুযোগ আছে। তবে এই আইনে প্রতিকার পেতে হলে মেধা সম্পদটির যে রেজিস্ট্রেশনটি করতে হয় তা তাদের আছে কিনা সে বিষয়টি এখনও পরিস্কার না।

কয়েকদিন আগেই তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ওয়েব সিরিজ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, সরকার ওয়েব সিরিজের বিপক্ষে নয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বকে অনুকরণ করে দেশের ওয়েব সিরিজে ‘ন্যুডিটি’, ‘ভালগারিজম’ তুলে আনা সমীচীন নয়।

আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, কন্টেনগুলোর আইনগত অনুমোদন না থাকে তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। গ্রামীণফোন ও রবি প্ল্যাটফর্ম থেকে ওয়েব সিরিজ আপলোড করার আইনি ভিত্তি আছে কি না, তা যাচাই করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন