চীনের সেনাবাহিনীর ছোঁড়া বুলেটের আঘাতে এক কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছে তিন ভারতীয় সেনা। এর আগে প্রায় ৪৫ বছর আগে ভারত-চীন সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। তবে সাড়ে চার দশক আগের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার সাথে সোমবার (১৫ জুন) রাতে গলোয়ানের ঘটনার মিল সহজে চোখে পরবে না। তবে মিল একটা আছেই। সেদিনও ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রবেশ প্রাণ দিয়ে রুখে দিয়েছিল কয়েকজন অসম সাহসী ভারতীয় সেনা।
১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধের পর ১৯৬৭ সালের প্রায় পাঁচ দিনব্যাপী চলা সিকিমের সীমান্ত সংঘর্য অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী এবং আলোচিত ঘটনা ছিল। কিন্তু ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের ইতিহাসে অরুণাচলের তুলুঙ-লা-র ঘটনাই সোমবার রাতের গলোয়ানের ঘটনার আগে শেষ সংঘর্য যেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ভারতের জওয়ানরা।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুই দেশের মধ্যে উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫-এর ২০ অক্টোবর অরুণাচলে কোনো প্রকার উত্তাপের লেশমাত্র ছিল না। খুব রুটিন মেনেই সে দিন ভোর থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন আসাম রাইফেলস-এর ২৫ ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা। টহলের রাস্তায় শেষ জনপদ তাওয়াঙ জেলার থিঙবু-র মাগো গ্রাম রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২৪০ মিটার উচ্চতায় থাকা মাগো গ্রাম ছেড়ে টহলদারি দল এগিয়ে যায় আরো ওপরের দিকে। হিমালয়ের কোলে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত গিরিবর্ত্ম তুলুঙ-লায়ের কাছে। ভারতীয় ভূখণ্ড রক্ষায় মাগোর মতোই কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪ হাজার ৮৬৩ মিটার উঁচু ওই গিরিপথ।
প্রায় ১৫ দিন পরে সেনাদের একটি তার বার্তা প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সে দিন তুলুঙ-লাতে পৌঁছনোর আগেই প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চীনা সেনার এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষনের মুখোমুখি হয় ভারতীয় টহল বাহিনী। সকলের অলক্ষে ওই গিরিপথের একটি দুর্গম অংশ দিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছিল চীনা বাহিনীর গোটা একটি প্লাটুন। রাতারাতি পাথরের দেওয়াল খাড়া করে তার পিছন থেকে ভারতীয় টহল বাহিনী লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল চীনা বাহিনী। ওই দিনের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় আসাম রাইফেলসের ৪ জন জওয়ানের। কিন্তু ওই টহলদার বাহিনী চীনা অনুপ্রবেশকারীদের পিছে সরতে বাধ্য করে। যদিও সে দিন চীনা বাহিনী অবস্থানগত ভাবে ভারতের সেনার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক জায়গায় ছিল।
ভারত-চীনের মধ্যে ওটাই শেষ সংঘর্ষ যেখানে মৃত্যু হয়েছিল ভারতীয় সেনার। তার পর থেকে গত ৪৫ বছরে আরো কঠোর করা হয়েছে ওই এলাকার সেনা অবস্থান। ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং সেনার যৌথ নজরদারি চলে সর্বক্ষণ। তবে সে দিনের অনুপ্রবেশের ঘটনা শুনিয়ে এখনো সতর্ক করা হয়, ওই এলাকায় কর্মরত সেনা সদস্যদের। কারণ তুলুঙ লা থেকে আরও দক্ষিণে সে লা গিরিপথে নিজেদের অবস্থান হারিয়েই ১৯৬২ সালে চীনা বাহিনীকে ভারতীয় ভূখণ্ডে বিনা বাধায় ঢুকে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া ছিল ভারতীয় বাহিনীর ভুল সিদ্ধান্ত। সেই ঘটনার সাক্ষী এই মাগো নামের গ্রামটি। ওই গ্রামের উপর দিয়েই চীনের লাল ফৌজ ঢুকে পড়েছিল অরুণাচল প্রদেশের অনেকটা ভিতরে। আনন্দবাজার সূত্রে জানা গেছে।
আনন্দবাজার/তা.তা