গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডালসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। তবে সারা বছরজুড়ে ভোক্তাদের এসব পণ্য কিনতে হয়েছে অতিরিক্ত দামে। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী গত একবছরে যে কয়টি পণ্যের দাম কমেছে, তার চেয়ে দাম বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যের সংখ্যাই বেশি।
টিসিবির তথ্যমতে, গত একবছরে ৫০টি পণ্যের মধ্যে ৪০টি পণ্যেরই দাম বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে মাত্র ১০টির। দাম কমার তালিকায় রয়েছে— আটা (প্যাকেট), ময়দা (প্যাকেট), ছোলা, অ্যাংকর ডাল, হলুদ, লবঙ্গ, তেজপাতা, ব্রয়লার মুরগি, দেশি মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিম। এর মধ্যে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ডিমের দাম কমেছে হালিতে ৩ টাকা।
সরকারি তথ্যমতে, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে গরিবের খোলা আটা, খোলা ময়দা, মোটা চালসহ বাকি সব পণ্য।
টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী, গত একবছরে আলুর দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। গত বছরের ৫ জুন যে আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি, শুক্রবার (৫ জুন) সেই আলু বিক্রি হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ টাকা।
এদিকে, টিসিবি’র দেওয়া তথ্যমতে একবছরের ব্যবধানে মশুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ গেল বছরের এই দিনে যে ডাল ৬০ টাকায় পাওয়া যেতো, শুক্রবার সেই ডাল কিনতে হয়েছে ১১০ টাকায়। একইভাবে ৫৫ টাকা কেজি দামের মশুর ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। ১০০ টাকা কেজি দামের মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা করে। একবছরে মুগ ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। গত একবছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তাছাড়া মসলা জাতীয় পণ্যটি ক্রেতাদের নাগালের বাইরে ছিল দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময়। মাত্র ২০ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ টাকা দিয়েও কিনতে হয়েছে। ৭০ টাকা কেজি দেশি রসুন এখন কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা দিয়ে।
এছাড়া, শুকনো মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। গেল বছর দেশি শুকনো মরিচের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এখন সেই শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে। পাশাপাশি আমদানি করা প্রতিকেজি শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
দাম বৃদ্ধির এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, ‘এখন মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। কাজেই পণ্যের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে ব্যাপারে সরকারের সজাগ দৃষ্টি থাকা জরুরি।’ তিনি জানান, ‘শুধু পণ্যের অভাবেই একটি দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় না, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকলেও তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
এ বিষয়ে টিসিবি’র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, ‘জিনিসপত্রের দাম যাতে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে থাকে, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে টিসিবি’র পরিচালনায় নিয়মিত ডিলারের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে পেঁয়াজ, মশুরের ডাল, সয়াবিন, চিনি বিক্রি করা হয়।’
আনন্দবাজার/শাহী