রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইনই এখন ঘরবন্দি মানুষের জগৎ

ফাতেমা তুজ জহুরা। পড়াশোনা করেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। করোনার প্রভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তবে পড়াশুনা না করলেও থেমে নেই বন্ধু-বান্ধরে সাথে আড্ডা আর গান কিংবা সিনেমা দেখা।  সরাসরি না হলেও ভার্চুয়াল  উপায় তো আছেই। মোবাইল  আর ল্যাপটপকে এই সময়ের সঙ্গী করে  দিন পার করছেন  আইন বিভাগে পড়া এই শিক্ষার্থী।

সাধারণ ছুটির ফলে জরুরি সেবার বাইরে সব ক্ষেত্রের কর্মজীবীই এখন অবসরে। খেলার মাঠ, চায়ের দোকানের আড্ডা, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো, সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা, কিছুই করার সুযোগ নেই এখন। এতে অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন প্রযুক্তিসামগ্রীতে নির্ভর করতে হচ্ছে ঘরবন্দি এসব মানুষকে। বিশেষত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর টেলিভিশনই হয়ে উঠছে এ করোনা দিনে সবার সঙ্গী। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স—এসব অনলাইন দুনিয়াই এখন ঘরবন্দি মানুষের জগৎ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের বড় একটি অংশ জুড়ে মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার ফলে শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরণেরই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এদিকে শিশুদের পূর্ণ বিকাশে মোবাইল ও ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক কমিয়ে আনার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার জানান, এ জাতীয় ডিভাইস একনাগাড়ে ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা, চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন আছে, সেটির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। এছাড়া ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে আসার ফলে মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মানসিক সমস্যার মধ্যে আছে, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকার এ অভ্যাস একসময় আসক্তিতে পরিনত হতে পারে। এ ধরনের ডিভাইস দীর্ঘ সময় ব্যবহারের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় আর ঘুমের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনঃ  টোলের খরচ জানা যাবে গুগল ম্যাপে

এদিকে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের ব্যবহারে পিছিয়ে নেই শিশুরাও। পাঁচ বছর বয়সী টোটন দেব এ বছরই প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিছুদিন ধরে তারও একমাত্র সঙ্গী মোবাইল ফোন। টোটনের মা ব্যাংক কর্মকর্তা সুমা দেব জানান, বাচ্চাদের সবসময় ঘরে আটকে রাখা খুবই কষ্টকর। আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়। এ সময় অনেকটা বাধ্য হয়েই তার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে হয়। ঘরে মোবাইলে গেমস খেলার পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে তার সময় কাটে।

এ ব্যাপারে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ জানান, এখন শিশুদের সারা দিন ঘরে থাকতে হচ্ছে। আর তাদের ঘরে আটকে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। ঘরে থাকতে থাকতে বড়দের মত শিশুরাও মানসিক অবসাদে ভুগতে পারে। এমতাবস্থায় তাই অভিভাবকদের আরো মনোযোগী হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে শিশুদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তাদের সাথে গল্প করতে হবে। ঘরের ভেতরে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। বাসার দরজা-জানালা খোলা রেখে বাইরের পৃথিবীটাকে দেখতে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে তাদের নিয়ে ছাদেও যেতে পারেন।

আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন