বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো বিশ্ব জুড়ে যে ভাইরাসের প্রভাব ও বিস্তার আতঙ্কের কালো ছায়া ফেলেছে, স্বাভাবিকভাবেই সেটা ঘিরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
যেহেতু করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন একটি ভাইরাস এবং গত তিন মাসে এই ভাইরাসের জিনের ধরন বদলেছে ৩০০ বারের বেশি। কাজেই গবেষকেরাও হিমশিম খাচ্ছেন এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট ধরণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় বের করতে। এর ফলে সঠিক তথ্যের সাথে ছড়িয়েছে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণাও। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত এমন পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা তুলে ধরা হল।
বাদুরের স্যুপ থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি
বিশেষজ্ঞের মতে, এই ধারণার কোন প্রমাণ নেই। যদিও এটা সত্য যে পরীক্ষা করে বাদুরের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ইউমা রেজিনাল মেডিক্যাল সেন্টারের হসপিটাল মেডিক্যাল স্পেশালিস্ট আশিস শর্মা, এমডি বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে উহান শহরের সিফুড ও মাংসের বাজার থেকে। যেখানে বাদুরসহ অন্যান্য বহু প্রজাতির পশুপাখি ছিল তাই নিশ্চিত করে এটা বলা যায় না যে, বাদুর থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
সার্জিক্যাল মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে
বিশেষ কিছু মডেলের প্রফেশনাল, টাইট ফিটিং র্যাস্পাইরেটস (N95) স্বাস্থ্য কর্মীদের ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে করতে পারে। কিন্তু হালকা, ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া (ডিস্পোসেবল) সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণ মানুষদের করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে পারে না। এমনটাই বলেন টেক্সাসের টেক্সাস হেলথ রিসোর্সের ইনফেকশাস ডিজি স্পেশালিস্ট নিখিল ভায়ান, এমডি।
অন্য দেশ থেকে জিনিস কিনলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
প্রতিদিনই বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা চালাচ্ছেন এই ভাইরাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও নতুন তথ্য বের করতে। নিখিল বলেন, অন্যান্য আরও ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসও কোন বস্তু বা জিনিসের উপরে দীর্ঘ সময় জীবিত থাকতে পারে না। কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে অন্য দেশ থেকে কোন প্যাকেজ আসলে তার মাধ্যমে কোভিদ-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ভাইরাস মূলত মানুষের মাধ্যমে বিস্তার ঘটায়। মানুষের হাঁচি, কাশি, স্পর্শই ভাইরাস ছড়ানোর আসল মাধ্যম।
ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট প্রতিরোধ করবে করোনাভাইরাস
এখন পর্যন্ত গবেষকেরা এমন কোন প্রমাণ পাননি যা থেকে আমরা জানতে পারি, ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমনকি সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের সমস্যা প্রতিরোধেও অনেক সময় ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট কার্যকর না।
চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাবার খেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে
অনেকের ধারণা চায়নিজ রেস্টুরেন্টের খাবার খেলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে, মোটেও না। সেই হিসেব করতে গেলে তো ইতালিয়ান, কোরিয়ান, জাপানিজ, ইরানিয়ান খাবার পাওয়া যায় এমন রেস্টুরেন্টও যাওয়া যাবে না। আসলে রেস্টুরেন্টের সাথে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই। তবে পরিবেশিত খাবার সঠিকভাবে সিদ্ধ ও রান্না হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরী।
আনন্দবাজার/তা.তা