ঢাকা | শনিবার
৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে পুলিশকে জনগণের বন্ধুহিসেবে আবার আস্থা ফেরানো যায়

যেভাবে-পুলিশকে-জনগণের-বন্ধু-হিসেবে-আবার-আস্থা-ফেরানো-যায়.j

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ পার করছে। জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও তারপর রাজনৈতিক পালাবদল। রাজনৈতিক পালাবদলের প্রধান কারণ ছিল সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে কাঠামোগত ন্যায়বিচার জবাবদিহিতা লক্ষ্যকে সামনে রেখে।

এই অভ্যুত্থানে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনে পুলিশের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান নয় বরং রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিপ্লবের সময় সদস্যরাও প্রাণ হারান। অনেক পুলিশ সদস্যকে জনগণের হাতে মারও খেতে হয়েছে। এই দুঃখজনক ঘটনাগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের মাঝে গভীর ক্ষত হয়ে উঁকি দিতে থাকবে। এখন সময় এসেছে পুলিশকে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে সাজানোর।

পুলিশ চিরকাল জনগণের বন্ধু ছিল জনগণের বন্ধু থাকবে। পুলিশ মানেই জনতা আবার জনতা মানেই পুলিশ। পুলিশ ছাড়া সমাজে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না। পুলিশ ছাড়া সমাজ কি হবে তা আমরা ৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি। ৫ আগস্টের পর আমরা দেখতে পেরেছি চুরি,ডাকাতির মতো বিভিন্ন ঘটনা মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এবং মানুষকে বাধ্য করেছে রাজপথে নেমে আসতে এবং সারারাত পাহারা দিতে চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে। আমি তকী তাহমিদ একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে আমার কতগুলো চিন্তা ভাবনা তুলে ধরছি কিভাবে পুলিশকে সংস্কার করা যায়
১) প্রথমে আমি মনে করি বাংলাদেশ পুলিশকে সংস্কার করতে হলে অবশ্যই ১৮৬১ সালের উপনিবেশিক আমলের এক্ট থেকে সরে আসতে হবে, যে আইনে সেবার চেয়ে নিয়ন্ত্রণে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে এবং ২০১৩ সালে একটি পুলিশ সংস্কার প্রকল্পের অধীনে নতুন একটি পুলিশকে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল। এর কাজ চলমান ছিলো ২০০৬—২০১৬ সাল অবধি। এই খসড়া অধ্যাদেশটি গণতান্ত্রিক, জনবান্ধব পুলিশিং এর লক্ষ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এবং অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থাসহ জনসাধারণের পক্ষ থেকে তথ্যাবদি এবং জবাবদিহিতা আদায়ের বিধান রাখা হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও খসড়া অধ্যাদেশ এবং ২০১৩ সালের পর্যালোচনা রাজনৈতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্তের অভাবে থমকে যায়।

২) পুলিশিং সম্পর্কে একটি নতুন আইনি কাঠামো প্রয়োজন। এই আইন বলবৎ হলে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বাস্তবায়িত হবে যা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করবে।

৩) পুলিশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট রাখা। পুলিশিং কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে নিজের পকেট থেকে টাকা যেন খরচ না করতে হয়। আমরা জানি বিভিন্ন পুলিশিং কর্মকান্ডে ব্যস্থ থাকে তাদের মাসিক বেতন এত বেশি নয় অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে এই উচ্চমূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে ঠিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তারা এই টাকার অভাব পূরণের জন্য ঘুষ নেয়। জনগণ এই ঘুষ নেয়ার প্রকৃত কারণ তারা জানতে পারে না ফলে জনগণ এর কাছে পুলিশ সবসময় ঘুষখোর থেকে যায়।

৪)পুলিশে যোগদানের সময় যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। অনেক সময় অনেকপুলিশ সদস্যরা ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে তারা চাকরি নেয়। আবার অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী থাকার কারণে চাকরি পায় ফলে দলের প্রতি একটা আলাদা টান থাকে। তাই পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার সময় যাতে কোনো দলের লোক এবং টাকা না দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পুলিশ সদস্যটি টাকা দিয়ে যোগদান করার কারণে তার একটা পিছুটান থাকে এ টাকাটি তোলার জন্য ফলে সে ঘুষসহ বিভিন্ন কাজে টাকা নিতে চায় সেবার বদলে।

৫) জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ আচরণগত মান বজায় রাখতে হবে এবং নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুস্থতা ও প্রকৃত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন তদারকি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার বিকল্প নেই।

লেখক: বি.এস.সি অনার্স, প্রথম বর্ষ
ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন