নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সরিষা ফুল থেকে তিনটি ইউনিয়নে চলছে মধু সংগ্রহ। তাই মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাহিরের মৌয়ালদের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকেরা। আর সরিষা মাঠ থেকে মধু সংগ্রহের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করতে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। সরিষা চাষের পাশাপাশি মধু আহরণ করে দ্বিগুন লাভবানও হচ্ছেন উপজেলার অনেক কৃষক।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে চলতি মৌসুমে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামের সরিষার মাঠে ৮০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম ও আজিজুল ইসলাম। এছাড়া বড়গাছা ইউনিয়নে দুইজন কৃষক ২০টি ও মিরাট ইউনিয়নে একজন মৌয়াল ৬০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। নিজের জমি ও আশেপাশের জমিতে চাষ করা সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার কার্যক্রমকে আরো বেগমান করার লক্ষে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আগ্রহী কৃষকদের মৌ বাক্স ও সার্বিক কারিগরী সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে উপজেলায় মধু সংগ্রহের পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্থাপন করা মৌ বাক্স থেকে মধু আহরণের কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ। এসময় জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, তারা প্রতিবছরই সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করেন। তারা এবারোও নিজেদের উদ্দ্যোগে ও কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় স্থাপন করা ৮০টি মৌ বাক্স থেকে ২বারে প্রায় ৬২০কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন এবং মধু সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে তারা প্রতিকেজি মধু ৪০০-৪৫০টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এতে করে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। প্রতি মৌ বাক্স থেকে সপ্তাহে একবার মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার জমিতে বেশি মৌমাছি থাকার কারণে পরাগায়ন দ্রæত হওয়ার কারণে সরিষার ফলনও বেশি হয়। অপরদিকে মধু সংগ্রহ করে নিজেদের চাহিদা পূরণের পর তা বিক্রি করে বাড়তি অর্থও আয় করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক মুঠোফোনে বলেন, এই উপজেলার মিরাট ইউনিয়নে বাহির থেকে মৌয়ালরা এসে মধু সংগ্রহ করছেন। এবং বড়গাছা ও একডালা ইউনিয়নে স্থানীয় কৃষকরাই মধু সংগ্রহ করছেন। এপর্যন্ত ৬২০ কেজি মধু সংগ্রহ হয়েছে। আমরা তেল-ফসল প্রকল্প থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই একটু পরিশ্রম করলে সরিষার ক্ষেত থেকে বিপুল পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। আর যদি সার্বিক পরামর্শ নিয়ে সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স ফেলে মধু সংগ্রহ করা যায় তাহলে খুব সহজেই একদিকে যেমন মধু পাওয়া যাচ্ছে অপরদিকে সরিষার ফলনও অনেক বেশি পাওয়া সম্ভব। সরিষা চাষ করলে সেই জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সংগ্রহ করা মধু বিক্রির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাঁকাকে আরো গতিশীল করাও সম্ভব। তাই মৌয়াল ও কৃষকদের সরিষার ক্ষেত থেকে বেশি বেশি মধু সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।