বিশ্বকাপে টানা ৬ হারের পর অবশেষে শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় পেল বাংলাদেশ। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সোমবার (০৬ নভেম্বর) রাতটা আনন্দে রাঙালো বাংলাদেশ। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখলো সাকিবের দল।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে ২৮০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কান দল। অবশ্য লঙ্কান দল যেভাবে ব্যাট করেছে তাতে স্কোর আরও বেশি হওয়া অসম্ভব ছিল না। কিন্তু সাকিব সাদিরা সামারাবিক্রমার (৪১) উইকেট নিয়ে সেই পথে বাধার সৃষ্টি করতে পেরেছেন। সঙ্গে ম্যাথুজের নাটকীয় টাইমড আউটের ঘটনাতেও লঙ্কানদের চাপে ফেলেছিলেন তিনি। সেই মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়ে ইনিংসটা টেনে নিয়েছেন আসালাঙ্কা। তার দায়িত্বশীল সেঞ্চুরিতেই স্কোরটা ২৭৯ রান পর্যন্ত গেছে। তবে শেষ দিকে আরও রান যোগ হওয়ার আগেই লেজ দ্রুত ছেঁটে দিতে অবদান রেখেছেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম সাকিব। ৮০ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন তিনি। শরিফুল ৫২ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। সাকিব আল হাসানেরও ৫৭ রানে শিকার দুটি। ৪৯ রানে একটি নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
লঙ্কানদের করা ২৭৯ রান টপকাতে অধিনায়ক সাকিব-শান্ত নিলেন অগ্রনী ভূমিকা। চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে লফটেড শটে দুই চারে ইনিংস শুরু করে আরও একবার বাজে শটে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। দিলশান মাধুশঙ্কার বলে ৫ বলে ৯ রানে থেমে যান তিনি। লিটন দাস একটা পুল শট মারতে গিয়ে শুরুতেই পেশিতে টান পান। উঠে দাঁড়িয়ে পরে কাসুন রাজিতাকে দুই ছক্কায় উড়ান। স্ট্রেট একটা ছক্কা মারতে গিয়ে আরও একবার টান পড়ে। কিছুক্ষণ শশ্রুষা নেওয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি। মাধুশঙ্কার দারুণ এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউতে কাবু লিটন ফেরেন ২৩ রান করে। সাকিব ক্রিজে আসতেই তুমুল আওয়াজ উঠে গ্যালারিতে। কিছু তার পক্ষে, বেশ কিছুই বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদেরও তাকে কিছু একটা বলতে দেখা যায়। সবচেয়ে উত্তেজনা তৈরি হয় যখন ম্যাথিউস বল করতে আসেন। ম্যাথিউসের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে একবার পরাস্ত হওয়ার পর ক্যাচ দিয়ে দেন শর্ট কাভারে।
৭ রানে থাকা সাকিবের ক্যাচ রাখতে পারেননি আসালাঙ্কা। জীবন পেয়ে বাজে ছন্দে থাকা সাকিব এরকম দেন হুঙ্কার। শান্তর সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। দারুণ খেলে দুজনেই সমীকরণ করে দিতে থাকেন সহজ। মাঠে থাকা শিশিরও পক্ষে যায় বাংলাদেশের। বল গ্রিপ করতে ভুগতে থাকা লঙ্কান বোলারদের উপর চড়াও হন তারা। ক্রিজে দুই বাঁহাতি থাকার পরও অফ স্পিনারদের আক্রমণে আনতে পারছিলেন না লঙ্কান অধিনায়ক। কারণ বোলাররা বলই গ্রিপ করতে ভুগছিলেন। এমনকি পেসারদের বলও হাত ফসকে বের হচ্ছিল। সুযোগটা কাজে লাগাতে একদম ভুল করেননি সাকিব-শান্ত। দুজনেই বেছে নেন আক্রমণের পথ। কোন বোলারকেই থিতু হতে দেননি। এরপর সাকিব ৬৫ বলে খেললেন ৮২ রানের ইনিংস খেলেন। বাজে ছন্দ দূর করে শান্ত ১০১ বলে করলেন ৯০ রান। তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ১৪৯ বলে ১৬৯ রান তুলে। সাকিবকে আউট করে হাতে ঘড়ির ঈশারা দেন ম্যাথিউস। খানিক পর শান্তকেও ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড করে দেন ম্যাথিউস। পর পর দুই উইকেট ফেললেও জয় তখন একদম নাগালে বাংলাদেশের। নাটক অল্প-বিস্তর যেন তবু ছিলো। মাহমুদউল্লাহও কাজটা শেষ না করে থিকসেনার বলে হয়ে গেলেন বোল্ড। মিরাজও দিলেন ক্যাচ তুলে। তবে এতে কেবল খানিকটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। শেষে ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিবের দল।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে করা টাইমড আউটে ম্যাচের আলোচনা: ২৫তম ওভারে দ্বিতীয় বলে সাদিরা সামারবিক্রমা আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে আসেন এঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ব্যাটিং শুরু করার আগে আবার হেলমেট বদলাতে যান ম্যাথিউস। ততক্ষণে নিয়মে থাকা দুই মিনিট পেরিয়ে যায়। কোন ব্যাটার আউট হলে নতুন ব্যাটারকে দুই মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে বল মোকাবিলা করার জন্য৷ লঙ্কান ব্যাটার তা না পারলে আম্পায়াররা তাকে জানিয়ে দেন আউটের কথা। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও পরে ম্যাথিউসকে কথা বলতে দেখা যায়। শেষে টাইমড আউট হয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন অঙ্গভঙ্গিতে।
সেসময় ক্রিজে থাকা শ্রীলঙ্কার চারিথ আসালাঙ্কা পুরো ঘটনাই কাছে থেকে দেখেছেন। শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি ব্যাটার আসালাঙ্কা বলেন, ‘আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে এটা স্পিরিট অফ ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়। যদিও এটা ক্রিকেটের নিয়ম।’ ২৫তম ওভারের সে ঘটনার পর আসালাঙ্কা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ১০৫ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলার পর আসালাঙ্কাও সেই আউট নিয়ে নিজের অসন্তোষ জানিয়েছেন। পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুসও একই সুরেই কথা বলেছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯/১০
(আসালাঙ্কা ১০৮, থিকশানা ২১, ধনাঞ্জয়া ৩৪,মাদুশাঙ্কা ০*; দুষ্মন্ত চামিরা ৪, রাজিথা ০, ম্যাথুজ ০, সাদিরা ৪১, নিসাঙ্কা ৪১, মেন্ডিস ১৯, পেরেরা ৪)
বাংলাদেশ ৪১.১ ওভারে ২৮২/৭,
(সাকিব ৮২, নাজমুল হোসেন শান্ত ৯০, তাওহীদ হৃদয় ১৫, তানজিম ৫; তানজিদ ৯, লিটন দাস ২৩, মুশফিকুর রহিম ১০, মাহমুদউল্লাহ ২২, মিরাজ ৩)
ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।